সীমাহীন দুর্নীতিকে প্রশ্রয়
দেশে, প্রবাসে বসবাসকারী প্রতিটি সাধারন বাংলাদেশির দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অন্যতম প্রধান চাওয়া ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান! নির্বাচনী ইশতেহার ছাড়াও কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাবেন। দুর্নীতি বন্ধ হলে দেশের মানুষ শতভাগ সেবা পাবে। ভোট মানুষের কাছে চাইতে হবে না। তারা সেবা পাবার জন্যই এই দলকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব দেবে। ঐ বলা পর্যন্তই। বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল, অথচ প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা এদিকে ভ্রুক্ষেপও করলেন না। প্রধানমন্ত্রী কোনো এক মিডিয়াতে বললেন, “তার অফিসের পিওনও আজ চারশ কোটি টাকার মালিক”। আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি এ কথা তিনি কেন বলেছিলেন! কি বুঝাতে চেয়েছিলেন। তিনি কি বুঝাতে চেয়েছিলেন তা জানিনে, বুঝতেও পারিনি, তবে আমি সহ সারা দেশের মানুষ মুহূর্তেই তার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন এই ভেবে যে, যিনি নিজের অফিসের একজন পিওনের দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, তিনি কেমন করে দেশের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রন করবেন, কিভাবে করবেন? দুর্নীতিবাজ শক্তি এতটাই বেপরোয়া ছিল যে, স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মচারী আফজাল তাঁর স্ত্রীসহ দেড় হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন নিরাপদে। একজন প্রশান্ত হালদার সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সাংসদদের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। কিন্তু কারোর দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। একজনকে মন্ত্রীত্ব থেকে বাদ দেওয়া হলেও তাকে ‘দেশপ্রেমিক’ আখ্যা দিয়েছেন। পাঁচ বছরের মাথায় এসে কোনও মন্ত্রী ৩ হাজার একর জমির মালিক হয়েছেন, কারও কারও সম্পদ বেড়েছে কয়েক শ’গুণ। কোনও মন্ত্রীর লোকজন ধরা পড়েছেন বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে। সাংসদ বদি ‘ইয়াবা সম্রাট’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই "ইয়াবা সম্রাট" কে সঙ্গে নিয়ে মাদকবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। প্রায় কোনওটির তদন্ত-বিচার হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির প্রশ্রয় সৃষ্টি করেছে, বেনজিরকে, মতিউর, এস আলম, প্রদীপ হাওলাদার গংদের, যারা এদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, আত্মসাৎ করেছে। এমন কি ড্রাইভার আবেদ আলীর দুর্নীতিতেও তিনি টু শব্দ করেন নি।
আমরা বাংলাদেশিরা যারা এই প্রবাসে বসবাস করি তারাও সরকারি আমলা কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতির উত্তাপ অনুভব করেছি। পুঞ্জীভূত হয়েছে ক্ষোভ মনের গহীনে। দেশ থেকে আমলা, মন্ত্রীরা সরকারী সফরে আসেন আমরা চেয়ে চেয়ে এদের ঠাট-বাট দেখি।
উদাহরন দেই। একবার এলেন দেশের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান গবেষণাগারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের দল। সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পাতি মন্ত্রী আর কয়েকজন সিনিয়র জুনিয়র আমলা। কেন এলেন? মেলবোর্নে মাছ চাষ দেখতে। হলি কাউ! আমি আজ প্রায় তিন যুগ মেলবোর্নে বাস করি, শিক্ষকতাও করি এ সংক্রান্ত বিষয়ে। আজ পর্যন্ত মেলবোর্নে মাছ চাষ কোথায় হয় জানতে পারলাম না। আর ওনারা বিশাল দল নিয়ে এলেন মাছ চাষ দেখতে! দলটির যে স্থানীয় গাইড ছিল তার কাছ থেকে দলটির মেলবোর্ন ভ্রমন সূচি দেখার সুযোগ হয়েছিল। তাদের ভ্রমন সূচিতে ছিল, মেলবোর্নের ডকল্যান্ড টাওয়ারে ওঠা যেটাতে সাধারনত শিশুরাই ওঠে, মেলবোর্নের বিখ্যাত ওশেন ড্রাইভ যাওয়া আর ফিলিপ আইল্যান্ডে পেঙ্গুঈন প্যারেড আর মেলবোর্ন ডাউন টাউনে ঘোরা।
আরেকটা উদাহরন দিই। সিডনীতে দেখা হয়েছিল এক ভদ্রলোকের সাথে। পেশা কোনো এক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর এপিএস। তার একছেলে এক মেয়ে। দুজনেই সিডনীতে স্নাতক করতে এসেছে। এপিএস ভদ্রলোক বড় একটা বাড়ি কিনেই ফেলেছেন, ছেলে ও মেয়ে যেন আরামে লেখাপড়া করতে পারে। ভদ্রলোক কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ভাই অষ্ট্রেলিয়া এসেছেন, দেশের জন্যে শপিং করবেন না? ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি হাসি ভাব এনে বললেন, “নাহ! কেনার কিছুই নেই। দেশে সব পাওয়া যায়। তবে দেশে যাওয়ার আগে কয়েকটা আইফোন আর আইপ্যাড কিনতে হবে। গিফ্ট দিতে হয় তো”।
ছাত্রলীগের দাপট
তরুণরাই একটি সমাজের গতিপ্রকৃতির চালিকা শক্তি। তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা। তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারা। তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্যায়কে প্রতিরোধ করা। তাই সমাজকে বদলাতে হলে, সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে তারুণ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে তরুণরাই হচ্ছে একটি জাতির প্রাণশক্তি। এই ভাবনা থেকে প্রথমে ছাত্রদের সংগঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করা হয়। তার পরের বছর ১৯৪৯ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
২০২৪ এর ছাত্রলীগ আর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের জন্য সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রলীগ এক নয়। গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের ভূমিকা একেবারে বদলে গিয়েছিল। সংগঠনটি ক্ষমতা ও একচেটিয়া দাপট প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। ছাত্রলীগের তান্ডবে, ঔদ্ধত্যে ছাত্রছাত্রী সাধারন মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছিল। ছাত্রলীগ করলে হলে থাকার ব্যবস্থা হতো, চাকরি মিলতো, ব্যবসা-বাণিজ্যেও নানা রকম সুযোগ তৈরি হতো। ছাত্রলীগ নেতারা এতটাই ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছিল যে প্রশাসনিক শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিরাও তাদের তোয়াজ করে চলতেন। সব ধরনের নির্মাণকাজের ঠিকাদারি, কেনাকাটায় এদের অদৃশ্য ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল।
বিদেশে পড়ে থাকলেও দেশে নিয়মিতই যোগাযোগ থাকে। আমার প্রাক্তন শিক্ষকতা করার জায়গা, আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় এমন কি আমার সেই গ্রামের মানুষের সাথে। ওদের কাছ থেকেই শুনতে পাই- গ্রামে কে কেমন আছে যাদের চিনি। ওদের কাছ থেকেই শুনতে পাই "ওমুকের ছেলে কোটিপতি। কেমন করে? সে উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতার খুব ঘনিষ্ঠ। এই অমুক কে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি। গ্রামের নিরীহ গোবেচারা দিন মজুর। আর ছাত্রলীগের নেতা হলে তো কথাই নেই। পুরো উপজেলা তার রাজ্য। স্বাধীনতার সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের চেহারা বিভিন্ন সময় পত্রিকাতে, ইতিহাসে আমরা দেখেছি। কি সাধারন বেশভূষা। পাজামা পাঞ্জাবি অথবা শার্ট আর প্যান্ট পরনে। আমাদের সময়ের ছাত্র নেতাদেরও দেখেছি, কি সাধারন বেশভূষা। আর একালের ছাত্রলীগের নেতা-নেত্রীদের দেখেছেন না? ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা-নেত্রী যখন করিডোর দিয়ে হাটে, পিছে একদল সংগী নিয়ে। পরনে ব্রান্ডের পোষাক, হাতে দামি ঘড়ি, লেটেষ্ট মডেলের আই ফোন, চোখে দামী সানগ্লাস। কড়িডোর দিয়ে বেশি দুর হাটে না, একটু হেটেই দামি গাড়িতে উঠে পড়ে। দেখে মনে হয় সৌদি যুবরাজ। এই কোটা আন্দোলনের সময়ে দেখা গেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হলের ছাত্রী নেত্রীর জন্ম দিন পালন হচ্ছে ফুলের পাপড়ির বিছিয়ে।
প্রহসনের নির্বাচন
শিশুবেলায় বোনদের সাথে মিছেমিছি রান্নাবাটি রান্নাবাটি খেলতে হতো। মাটির ভাঙা কলস বা ভাঙা কোনো পাত্র যোগাড় করে কিংবা গাছের শুকনা পাতা যোগাড় করে হাড়ি পাতিল, প্লেট গ্লাস চামচ বানানো হতো। গাছের পাতা কুচি কুচি করে কেটে, নরম ইটের টুকরা গুড়ো করে, শোলা কুচি কুচি করে মিছামিছি মজাদার খাবার রান্না হতো। পুরুষ সদস্য বলে সেই সব রান্না আমাকেই মিছামিছি খেতে হলো। শুধু খেয়েছি মুখে বললেই হতো না। খাওয়ার ভান করে মুখ দিয়ে আবার শব্দ না করলে রাধুনিরা খুশী হতো না।
আওয়ামী লীগের প্রহসনের নির্বাচন ২০১৪ সালে যখন তারা একরকম নির্বাচন ছাড়াই জাতীয় সংসদ গঠন করেন, তখন তাকে ‘তামাশার নির্বাচন’ বলে অভিহিত করা হলো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ ডজনখানেক পত্র-পত্রিকা ২০২৪ সালের নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ বলেছে। এটা ছিল ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার একটি বিবেকহীন মহড়া। সংবাদপত্রে শিরোনাম ছিল ‘একচেটিয়া ভোটে নৌকার জয়’। প্রায় সব সংবাদপত্রে একই রকম ভাষা ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সারা দেশের ভোটচিত্র জানাতে গিয়ে ‘নিয়ন্ত্রিত’ মাঠ, অসংখ্য অনিয়ম এবং অজস্র অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সব কিছু উপেক্ষা করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। শত বাধা উপেক্ষা করে তারা ভোটে অংশ নিয়েছে। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘এবারের নির্বাচনে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। কেউ বলতে পারবে না দিনের ভোট রাতে হয়েছে।“ দেশকে নিয়ে, দেশের ভাবমুর্তিকে নিয়ে এত বড় প্রহসন বাঙালি অতীতে আর দেখেনি।
২০২৪ এর নির্বাচন কে কোনও ভাবে সেই ছোটবেলার মিছামিছি রান্নাবাটি খেলার সাথেও তুলনা করতে পারিনি। ছোট বেলার সেই মিছামিছি খেলায় থাকত শিশু মনের অনাবিল আনন্দ। আর এই মিছামিছি নির্বাচন নির্বাচন খেলা ছিল প্রহসন, যা সুস্থ বাঙালিকে অসুস্থ করে ফেলেছিল প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে।
সবকিছুতেই দলীয়করন
২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রশাসন নিয়ে বলা হয়েছিল, দলীয়করণমুক্ত অরাজনৈতিক গণমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও মেধারভিত্তিতে সব নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনিক সংস্কার, তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ই-গর্ভনেন্স চালু করা হবে।
আমাদের সময়ও আমরা দেখেছি মেধার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনোভাবেই প্রথম শ্রেণী ছাড়া নিয়োগ হতো না। পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রথম কয়েক জন হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতায় নিয়োগ পেয়েছে, বাকিদেরকে গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের গত দুই মেয়াদ ধরেই অনেকগুলো গবেষণা সংস্থাতেই দেখছি সর্বোচ্চ পদ যারা দখল করে আছেন, তাদের অনেকেরই গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসাবে চাকরী করারই যোগ্যতা নেই। কোনো রকমে ফেল করে রেফার্ড পেয়ে পাশ করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক পরিচয় আর সুবিধা নিয়েই প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদটি দখল করে বসে আছে। এরা প্রতি মাসে না হলেও বছরে বারো তের বার বিদেশ যায়, ফার্স্ট ক্লাস বা বিজনেস ক্লাসে প্লেনে চড়ে।
টানা তিনটি শাসনামলে আওয়ামী লীগ সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অবসরের বয়স ও বেতন–ভাতাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে সেবা পাওয়া নিয়ে মানুষের ব্যাপক অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি আর হয়রানির অভিযোগ রয়েই গেছে। অনিয়ম-দুর্নীতি আর মানুষের হয়রানির কমবেশি অভিযোগ আছে জনপ্রশাসনের প্রায় সবকটি অংশের বিরুদ্ধেই। বিশেষভাবে অভিযোগবিদ্ধ অংশগুলোর মধ্যে পড়ছে পুলিশ, ভূমি, কর, শিক্ষা, সামাজিক সহায়তামূলক ভাতাসহ বিভিন্ন সেবাদানকারীরা। খোদ সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরভাতা আর সুযোগ-সুবিধা পেতে ঘুষ-হয়রানির অভিযোগ করেন।
অরাজনৈতিক করার পরিবর্তে দলীয়করণের বৃত্তেই ব্যস্ত ছিল জনপ্রশাসন। দলীয় বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। সরকারের মেয়াদের পুরো সময় জুড়েই ছিল বঞ্চিতদের হাহাকার। ভিন্ন মতের কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হয়েছে, দেওয়া হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসর। পদের বেশি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ায় প্রশাসনে সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে অযোগ্য কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অযোগ্যতা এবং অদূরদর্শিতায় দেশকে খেসারত দিতে হচ্ছে । মেধাবী ও যোগ্য লোকদের সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে বসানো না হওয়াতে আন্তর্জাতিক সমস্যায় নাকানি চুবানি খেতে হয়েছে অসংখ্যবার।
টানা তিন মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকায় পুলিশ, আইনপ্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশনে ব্যাপকভাবে দলীয়করন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে অতি উৎসাহীরা সরকার দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে পুলিশকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে দলীয় সদস্যরা পর্যন্ত সমালোচনা করেছেন। খাদ্যপণ্যের বাজারে পুরোপুরি নৈরাজ্য চলেছে। ব্যবসায়ীদের একটা সিন্ডিকেট যা খুশি তাই করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা, ব্যাংক ও আর্থিকখাত, স্বাস্থ্য খাত নৈরাজ্যের অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। নৈরাজ্যের তালিকা করে বর্ননা করতে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা শেষ হয়ে যাবে, বর্ননা করা শেষ হবে না!
(চলমান)
লেখা: জনাব সাদিকুল আওয়াল (https://web.facebook.com/sadiq.awal.39)
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।
পূনশ্চ: জনাব সাদিকুল আওয়াল অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী, তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রাক্তন শিক্ষক এবং প্রথম ডিসিপ্লিন প্রধান ছিলেন।
প্রথম পর্বের লিংক https://dainikalokbortika.com/%e0%a6%86%e0%a6%93%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%80-%e0%a6%b2%e0%a7%80%e0%a6%97%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b2%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a6%95-%e0%a6%93-%e0%a6%b6/