দৈনিক আলোকবর্তিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সরাসরি কোন রাজনীতি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে লেখা সচেতনভাবে প্রকাশ করেনি। সাম্প্রতিক সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কোটা ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই ভাষণটি খুব প্রাসঙ্গিক মনে হলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি মিলিটারি একাডেমিতে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাচের মিলিটারি ক্যাডেটদের সামনে ভাষণটি প্রদান করেন। এই মহামূল্যবান ভাষণটি বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোধগম্য হবে কেনো আজও আমাদের তরুন শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে আত্মাহুতি দিতে হচ্ছে। এমন ভাষণ শুনেও গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের পরিবর্তন তো হয়ইনি উল্টো আমরা আরও ধবংশপ্রাপ্ত হয়ে শেষ সীমাও অতিক্রম করে ফেলেছি। পুরো রাষ্ট্রটাই আজ দিনে দুপুরে ডাকাতি করে চলেছে বঙ্গবন্ধুর উল্লেখিত চোরাকারবারী, মুনাফাখোর, ঘুষখোর, সম্পদ ও টাকা পাচারকারীর সংগবদ্ধ চক্র যাদের রয়েছে বিভিন্ন কর্পোরেট নাম ও ঠিকানা।
“তোমরা আদর্শবান হও, সৎ পথে থেকো মনে রেখো মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন, মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন। মাঝে মাঝে আমরা অমানুষ হয়ে যাই, এতো রক্ত দেয়ার পরে যে স্বাধীনতা এনেছি চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয় নাই। এখনো ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোরী বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে।দীর্ঘ তিন বৎসর পর্যন্ত এদের আমি অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনী। কিন্তু আর না, বাংলার মানুষের জন্য জীবন আর যৌবন আমি কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছি, এ মানুষের দুঃখ দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই। কাল যখন আমি আসতে ছিলাম ঢাকার থেকে এতো দুঃখের মধ্যে না খেয়ে কষ্ট পেয়েছে, গায়ে কাপড় নাই, কত অসুবিধার মধ্যে বাস করতেছে তবু হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক দুপাশে দাড়িয়ে আছে আমাকে দেখবার জন্য। আমি মাঝে মাঝে প্রশ্ন করি-তোমরা আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো? কিন্তু সেই দুঃখী মানুষ দিন ভরে পরিশ্রম করে, তাদের গায়ে কাপড় নাই, এদের পেটে খাবার নাই, তাদের বাসস্থানের বন্দোবস্ত নাই, লক্ষ লক্ষ বেকার, পাকিস্থানীরা সর্বস্য লুট করে নিয়ে গেছে, কাগজ ছাড়া আমার জন্য কিছু রেখে যায় নাই। বিদেশ থেকে ভিক্ষে আমাকে করে আনতে হয়, আর এই চোরের দল আমার দুঃখী মানুষ এর সর্বনাশ করে, এরা লুটতরাজ করে খায়। আমি শুধু ইমারজেন্সি দেই নাই, এবার আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যদি পঁচিশ বৎসর এই পাকিস্থানী জালেমদের বিরুদ্ধে জিন্নাহ থেকে আরম্ভ করে গোলাম মোহাম্মদ, চৌধুরী মোঃ আলী, আয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে বুকের পাঠা টান করে সংগ্রাম করে থাকতে পারি আর আমার ৩০ লক্ষ লোকের জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি, তাহলে পারবো না? নিশ্চই ইনশাআল্লাহ পারবো, এই বাংলার মাটি থেকে এই দুর্নীতিবাজ, এই ঘুষখোর, এই মুনাফাখোরি, এই চোরাচালানকারীদের নির্মূল করতে হবে। আমিও প্রতিজ্ঞা নিয়েছি, তোমরাও প্রতিজ্ঞা নাও। বাংলার জনগণও প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করো, আর না সহ্যের সীমা হারিয়ে ফেলেছি, এই জন্য জীবন আর যৌবন নষ্ট করি নাই, এই জন্য শহীদরা রক্ত দিয়ে যায় নাই। কয়েকটা চোরাকারবারী, মুনাফাখোর, ঘুষখোর দেশের সম্পদ বাইরে বাইর কইরা দিয়া আসে, জিনিস এর দাম গুদাম করে মানুষকে না খাওয়াইয়া মারে। উৎখাত করতে হবে বাংলার বুকের থেকে এদের। দেখি কতদুর তারা টিকতে পারে? চোরের শক্তি বেশী না ইমানদারের শুক্তি বেশী সেইটেই এখন প্রমান হয়ে যাবে। অন্যায়ের কাছে কোনদিন মাথা নত করি নাই। বারবার পাকিস্থানীরা আমাকে ফাঁসিতে চেয়েছে, বারবার বুক টান করে আমি দাড়িয়ে রয়েছি, কারন আল্লাহ আমার সহায় ছিলো, বাংলার জনগনের দোয়া ছিলো, এখনো সেই দোয়া আছে। ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাহায্য, তোমাদের সহানুভূতি, তোমাদের কাজ, দেশের জনগনের ভালোবাসা, আর ইমানদার মানুষের সহযোগিতায় এই দুষ্কৃতিকারীদের নির্মূল করতে হবে।”
সংকলনে: দৈনিক আলোকবর্তিকা।
Leave a Reply