বলা হয় এদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অনলাইন পত্রিকা। মূল প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর সহযোগী হিসেবে তাদের প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকার পাশাপাশি সারাদেশে অসংখ্য বিখ্যাত অখ্যাত নামের অনলাইন পত্রিকা আমরা দেখতে পাই। এসব পত্রিকায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ বা রচনাগুলো নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে থাকে, এসব অনলাইন পত্রিকার সাথে যুক্ত থাকেন বহু যোগ্য, আধাযোগ্য এবং অযোগ্য প্রকাশক তথা সংবাদকর্মীবৃন্দ। আমরা ধরে নিতে পারি প্রত্যেকটি অনলাইন পত্রিকারই দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যও আছে। তবে ঠিক জানি না কতটি অনলাইন পত্রিকা পেশাদার সংবাদকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হয়? আমার ধারনা শুধুমাত্র প্রিন্ট পত্রিকার অনলাইন সহযোগী পত্রিকাগুলোই পেশাদারদের মাধ্যমে চলছে এবং অধিকাংশ অনলাইন পত্রিকাগুলোই আমার মত অপেশাদার, আধাযোগ্য একদুইজনের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে!
আমি আধাযোগ্য কিনা তাও জোর গলায় বলতে পারবো না, শুধুমাত্র স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি, লেখালেখি করতে ভালোবাসি, ভালো লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ার ধৈর্য্য আছে এটুকুই যোগ্যতা। আমি জানি একটি পত্রিকা পরিচালনার জন্য আমার এসব আধাযোগ্যতাকে পুরোপুরি অযোগ্যতাই বলা যেতে পারে। সম্প্রতি কিছু ঘটনাবলীর ধারাবাহিকতায় আমার লেখা হুবহু অনলাইন পত্রিকায় ও প্রিন্ট মিডিয়াতে ছাপার যোগ্য হতে দেখে উৎসাহিত বোধ করেছি। সেই উৎসাহ থেকেই সাহস করে বাংলাদেশের অনলাইন পত্রিকা প্রকাশের সহজ পদ্ধতি দেখে ভিন্ন ধারার একটি অনলাইন পত্রিকা হিসেবে 'দৈনিক আলোকবর্তিকা'র জন্ম দিয়েছি।
ফেসবুকে আমি বেশ নিয়মিত। সেখানে প্রতিনিয়ত অনেকের লেখা গল্প, কবিতা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে রচনাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ি। অনেকের লেখাই বেশ মানসম্পন্ন বলে মনে হয়, কিন্তু ফেসবুক আসলে লাইক কমেন্টস করেই হারিয়ে যায় নতুন পোস্টের তলায়। ফেসবুক মেমোরিতে লেখাগুলো যদিও থাকে কিন্তু সামাজিক নানান পোস্টের রংবাহারী বিচিত্রতায় সাহিত্য ও রচনাগুলো আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে থাকতে পারে না। ফেসবুকে একটি আটপৌরে ছবি যতোটা ভিউ পায়, একটি গঠনমূলক ক্রিটিক লেখা কিন্তু তা পায় না। কারন ফেসবুকের অধিকাংশ ব্যবহারকারীরা স্ক্রল করে পরের পোষ্ট দেখতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।
আমি নব্বইয়ের দশকে যখন প্রিন্ট পত্রিকার প্রতিটি খবর ও রচনাগুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তাম তখনকার সেই অনুভুতির কথা মনে পড়লে এখনো অবাক লাগে! পত্রিকার ভালো খবর বা রচনাগুলো কাটিং জমানোর সেই স্মৃতিময় দিনে ফেরত যাবার বাসনায় ভাবি ফেসবুকের ভালো লেখাগুলো এভাবে কাটিং করে রাখা যেতো? মনে আছে যায়যায়দিন পত্রিকা মৌচাকে ঢিল নামে বিশেষ সংখ্যা বের করতো, বিভিন্ন দিবস বিশেষ করে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে নতুন লেখকদের নির্বাচিত গল্প প্রকাশ করতো। আনিসুল হক, সুমন্ত আসলাম সহ অনেক নতুন লেখকদের লেখার খুবই ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমারও ইচ্ছে হতো গল্প লিখে পাঠাই, লিখেও ফেলতাম কিন্তু নিজের লেখা গল্প শেষ পর্যন্ত নিজেই বাতিল করে দিতাম। কারন যায়যায়দিন পত্রিকার নির্বাচিত লেখাগুলোর মান যথেষ্ট ভালো হতো, আমি নিশ্চিত সেই সময়ের অনেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত লেখক বা কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
সেই ভাবনা থেকেই আমার পরিচিত ফেসবুক লেখকদের নির্বাচিত লেখা প্রকাশ করতে চাই দৈনিক আলোকবর্তিকায়, এসব লেখকদের পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসতে সংবাদ মাধ্যমই রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমার এ চেষ্টায় বাংলা লেখালেখির জগতে উঠে আসতে পারেন কিছু মননশীল ও সৃষ্টিশীল লেখক, কবি ও সাহিত্যিক। আজ আমি হয়তো একাই আরম্ভ করেছি আনকোরা ও নতুনদের লেখার আলো ছড়িয়ে দেবার ছোট্ট উদ্যোগটি। আমি বিশ্বাস করি একদিন দৈনিক আলোকবর্তিকা'র প্লাটফর্মে শত শত ইতিবাচক ভাবনার লেখক ও সংবাদকর্মী যুক্ত হয়ে মানবিক দেশ গড়বেন এবং ইতিবাচক আলোয় সমগ্র পৃথিবীকে আলোকিত করবেন।
পল্লব খন্দকার, ০২ জুলাই ২০২৩
mazhabkh93@gmail.com