ঐতিহাসিক প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির পক্ষে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সম্পর্কে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের লেখা "মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি" গ্রন্থ হতে কিছুটা অবগত হবার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাছাড়া জোহরা তাজউদ্দীন, তাঁদের সন্তান সিমিন হোসেন রিমি ও সোহেল তাজের কথাবার্তা, আচার আচরণ এবং মাঠের রাজনীতিতে সকলের অবদান থেকেও বুঝতে অসুবিধা হয় না এই পরিবারটি বাংলাদেশের পক্ষে প্রকৃত দেশপ্রেম ও জনবান্ধব রাজনীতির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে গেছে। এদেশের কল্যাণ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য দুর্নীতিমুক্ত লুটপাটতন্ত্রহীন যে রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন ছিলো তা শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবর্তে তাজউদ্দীন সাহেবের পক্ষে দেয়ার সুযোগ বেশী ছিলো বলে আমার মনে হয়। কারণ তিনি হাজারো প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস অস্থায়ী প্রবাসী সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন!
বেদনার বিষয় হলো দল হিসেবে আওয়ামীলীগ তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবের এই ক্যারিশ্ম্যাটিক নয় মাসের নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে কোনদিনই সম্মুখে আসার সুযোগ দেয়নি পাছে শেখ মুজিবের অবদান ঢাকা পড়ে যায়? অর্থাৎ, ইতিহাসের অমোঘ সত্যকে কিছুটা কেটে ছেঁটে ফেলে খন্ডিত অবস্থায় আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে সেই শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবতনের দিন থেকেই। একটা কুচক্রী ধান্দাবাজ লুটেরা মহল ইচ্ছাকৃতভাবেই তাজউদ্দীন সাহেবকে শেখ মুজিব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে সর্বোচ্চ চেষ্টায় লিপ্ত হয় ও সফলতার সাথে পনেরোই আগস্ট, ৩ নভেম্বর ইত্যাদি চিত্রনাট্য বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়। ইতিহাস নিকৃষ্ট বিজয়ীদের কথা লিখে রাখে কিন্তু পরাজিত মহামানবদেরকেও সহজে মুছে ফেলতে পারে।
সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পর সুশীল বা পরিশীলিত রাজনীতির বিপরীতে কুটিল বা নষ্টদের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো শেখ মুজিবের প্রিয় পাত্র খন্দকার মোস্তাকের পরিচালিত চিত্রনাট্য ধরে। কে জানে শেখ মুজিব যদি তাজউদ্দীন বলয়কে প্রশ্রয় দিতেন তাহলে বাকশালও কায়েম করতেন না এবং পনেরোই আগস্ট সংগঠিত হতো না। বাংলাদেশ একটা সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে স্বাধীনতার কুড়ি পঁচিশ বছরের মাথাতেই সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ায় পরিণত হতে পারতো। কিন্তু খন্দকার মোস্তাকের বলয়ে ঢুকে শেখ মুজিব নিজেও পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের শিকার হলেন পাশাপাশি দেশটাকেও সুস্থ ধারার রাজনীতি ও টেকসই উন্নয়নের পথ থেকে কমপক্ষে একশত বছর পিছিয়ে দিলেন।
তাজউদ্দীন সাহেবের আদর্শের অনুসারী হিসেবে তাঁর পূত্র সোহেল তাজ বিদেশে লেখাপড়া করেছেন, সুশিক্ষিত ও মার্জিত রুচিশীল হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। দেশের সেবা করার সহী নিয়তে ২০০১ সালে তাঁর প্রয়াত বাবা ও মায়ের দলের হয়ে নির্বাচনী রাজনীতির মাঠে অভিষিক্ত হন। সেই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা তাঁকে ২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায় রহস্যময় কারণে তিনি মন্ত্রী সভা থেকে পদত্যাগ করেন, তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত না হলে সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। সেই রহস্যের পুরোপুরি উন্মোচন শেখ হাসিনার প্রায় ষোল বছরের শাসনামলে হয়নি, ইচ্ছে করেই জনাব সোহেল তাজ মিডিয়ার সামনে কিছু বলেননি। সে কারণে তাঁর পদত্যাগ নিয়ে বিভিন্ন রকমের গুজব বাজারে প্রচলিত ছিলো। যেমন আমি শুনেছিলাম শেখ সেলিম সাহেব নাকি কোন একটি অনুষ্ঠানে সোহেল তাজকে সকলের সম্মুখে থাপ্পড় মেরেছিলেন আন্তর্জতিক সোনা চোরা চালানের সাথে জড়িত একজনকে সুযোগ দেয়া না দেয়ার ব্যাপারকে কেন্দ্র করে। সেই থেকে সোহেল তাজ রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে স্বাস্থ্য গঠনে যুবকদের সচেতনতা তৈরির কাজ করে যাচ্ছিলেন।
যাই হোক, পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাবার পর বা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ডিবি পুলিশ কতৃক আটককৃত সমন্বয়কদের খোঁজ নিতে ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়া নিয়ে সোহেল তাজ পুনরায় মিডিয়ার প্রচারের আলোয় চলে আসেন। সেই ধারাবাহিকতায় তাঁর মন্ত্রিত্ব ত্যাগের বিষয়টি নিয়ে ধীরে ধীরে মুখ খুলতে থাকেন। সর্বশেষ ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে দৈনিক কালের কন্ঠ অনলাইন পত্রিকায় তাঁর বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারটি পড়ে আমার পাঠকদের সাথে ভাগ করে নেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। নিচের লিংকটি ব্রাউজারে কপি করে পূর্নাংগ সাক্ষাৎকারটি পড়ে নেবার জন্য সবাইকে বিনীত অনুরোধ জানাই।
https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/09/28/1429685
সংকলন: পল্লব খন্দকার
সত্ত্ব: দৈনিক আলোকবর্তিকা।