পাট, চিংড়ি ও জাহাজনির্মাণ শিল্পের প্রাণকেন্দ্র খুলনা জেলা। সুন্দরবন, নদীবন্দর, বিস্তৃত শিল্পাঞ্চল ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনা খুলনা জেলাকে বৈশিষ্ট্যময় করেছে। জেলাটির উত্তরে যশাের ও নড়াইল, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বাগেরহাট ও পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলা অবস্থিত। খুলনা একই সঙ্গে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মহানগরী ও বিভাগীয় শহর। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের পরেই বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর খুলনা। দেশের প্রাচীন ও ব্যস্ততম নদীবন্দরগুলাের অবস্থানও খুলনা জেলায়।
নামকরণ
কথিত আছে, খুলনার প্রাচীন জনপদের নাম ছিল সপ্তগাঁও। খুলনা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে। অনেক ধরনের মতভেদ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলােচিত মতগুলাের একটি হচ্ছে, প্রাচীন বাংলার এক ধনপতি সওদাগর তাঁর স্ত্রী খুল্লনার নামে ভৈরব নদের পূর্ব তীর ঘেঁষে ‘খুল্লনেশ্বরী’ নামে একটি মন্দির তৈরি করেন। যা কালের বিবর্তনে পরিবর্তিত হয়ে ‘খুলনা’ নাম ধারণ করে। অনেকের মতে, ১৭৬৬ সালে ‘ফলমাউথ’ জাহাজের নাবিকদের উদ্ধার করা রেকর্ডে লিখিত Culnea শব্দ থেকে খুলনা নামের উৎপত্তি। এ ছাড়া ব্রিটিশ আমলের মানচিত্রে লিখিত Jessore-Culna শব্দ থেকে খুলনা নাম এসেছে বলেও অনেকের ধারণা।
ইতিহাস
খুলনা ছিল প্রাচীন বঙ্গ ও সমতট রাজ্যের অংশ। রাজা বল্লাল সেনের রাজত্বকালে এই অঞ্চল। সেন রাজবংশের একটি অংশ হয়ে ওঠে। এ অঞ্চলের পূর্বনাম ছিল জাহানাবাদ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে মুসলিম সাধক খান জাহান আলী গৌড় রাজার কাছ থেকে খুলনা বিভাগের একটি বড় অংশ নিয়ে একটি জায়গির অর্জন করেছিলেন। খান জাহান আলীর মৃত্যুর পর শহরটি আবার বাংলার সালতানাতের অংশ হয়ে যায়। ষােড়শ শতকে দাউদ খান কররানির শাসনামলে বিক্রমাদিত্য যশাের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং বর্তমান খুলনার অধিকাংশ এলাকা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।১৭৯৩ সাল পর্যন্ত খুলনা বাংলার স্বায়ত্তশাসিত নবাবদের অধীনে ছিল, যখন ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজামত (স্থানীয় শাসন) বাতিল করে এবং শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। শহরটি ১৮৪২ সালে মহকুমা হিসেবে যশাের জেলার একটি অংশ হয়ে ওঠে। ১৮৮২ সালে খুলনা স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা পায়। ১৯৮০ সালে মিউনিসিপাল করপােরেশন এবং ১৯৯৪ সালে সিটি করপােরেশনে রূপ লাভ করে খুলনা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনা ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করলেও খুলনা জেলা স্বাধীন হয় ১৭ ডিসেম্বর।
সূত্রঃ গুগল
সংকলনঃ বনানী ঘোষ, খুলনা।