খুব কাছের চেনা মানুষের হঠাৎ কোন অপ্রত্যাশিত কথা বা ব্যবহারের কারনে আপনার কি ভীষণ মন খারাপ, অনেক অনেক বেশি? কিন্তু আপনি মন খারাপের কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। যতোই ভাবছেন এটাই তো বাস্তব, চেনা মানুষটি যা বলেছে সেটা তো শতভাগ সত্যিই, তাহলে কেন মন খারাপ করবো? কিন্তু কোথায় কি? !!! আসলে কারণ নেই তা না, কারণ আছে কিন্তু সে কারণটা ভিত্তিহীন, অর্থহীন। কেন যে সব তছনছ করে দিয়ে মাঝে মাঝে কিছু মানুষের জীবনে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়…তা হয়তো আমরা জানি না।। হঠাৎ করেই মনে হয় একটা অর্থহীন সময়, অর্থহীন জীবন কাটাচ্ছি আমরা, যার বুঝি কোন কূল-কিনারা নেই!
জীবন যাত্রার পথ পাড়ি দিতে গিয়ে কত কষ্টের মরুভূমি চলতে হয় তার কোন ইয়ত্বা নেই, নেই কোন দিগন্ত। দুঃখ-কষ্টের শিলাবৃষ্টি জীবনের ক্ষণে ক্ষণে বর্ষিত হয়, কোন সময় হয় মহাপ্লাবন। আর সেই প্লাবনে আমরা ভেসে যাই অজানা অচেনা কোন সীমানায়। তখন অনুভব হতে থাকে জীবন একটা চেঁপে রাখা কষ্টের নাম, কষ্টে ভরা বুকটা ফেটে যেতে চায়। ভীষণ পানির তৃষ্ণা পায়, একদম ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া মাটির মত। সেই তৃষ্ণা আর মিটে না, তৃষ্ণা ভরা বুকে বেঁচে থেকেও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হয়।
কারো কারো জীবন যেন কষ্টের এক চিলেকোঠা… সেখানে বসবাস কষ্টের …শুধু-ই কষ্টের…।।
চেনা মানুষ অচেনা হওয়াটা যতোটা’না স্বাভাবিক তার চেয়েও বেশি অস্বাভাবিক লাগে তখন। প্রতিদিন আমরা একটু একটু করে মানুষ চিনি, আর অল্প অল্প করে বড় হই। আজব এ শহরে মানুষের যে কত রূপ, কত রঙ্গ যে জানে কি সেই মানুষগুলো…!!
পাশাপাশি বসবাস করেও অনেক দিনের চেনা মানুষটিকেও হঠাৎ করে কেমন যেন অচেনা লাগে, তার কথায়-ব্যবহারে তাকে আর চেনা যায় না, যেকোন সময় ধোঁকা খেতে হয়। আবার অল্প ক’দিনের পরিচিত মানুষটিও কেমন মুহূর্তেই আপন করে নেয়, আপন হয়ে যায়। বিপদে যার এগিয়ে আসার কথা সবার আগে, তাঁকে অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না আশেপাশে। যাকে কখনোই আশা করেননি, তাঁকেই হয়তো পেয়ে যেতে পারেন কষ্টের দিনে। সেই আপনার চোখের জল মুছে দিবে, কষ্টে পাশে থাকবে, মুখে হাঁসি ফোঁটাবে। আর যদি কাউকে কাছে নাও পান, দেখবেন নিজের মাঝেই অন্য এক আমির অস্তিত্ব টের পাবেন। এই আমিত্বটা স্রষ্টার দান। যার কেউ নেই, তাঁর জন্যও মনে হয় কেউ একজন থাকেন। কিন্তু আমরা তা বুঝি না, আমরা তা অনুভব করতে পারি না। কেউ একজন আছেন, কেউ একজন থাকবেই।
কেউ কেউ মানুষকে কষ্ট দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পায়। বিপদে হাত না ধরে কষ্ট দিতেই যেন পছন্দ করে, কষ্টে পাশে না দাঁড়িয়ে দূর থেকে উপহাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অনেক ক্ষতি করার পরেও যখন সে দেখে, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষটি তারপরেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন সে ঈর্ষান্বিত হয়। নিরীহ মানুষটির সাময়িক কষ্ট হয়, কিন্তু একদিন সে-ই কিন্তু জয়ী হয়। একটা সময় সেই কিন্তু সব চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়, মনের দিক থেকে একটা সময় সব চেয়ে কঠিন হয়। এতো বেশি কঠিন যে পাথরকেও যেন হার মানায়।
যে মানুষটা একটা সময় একটুতেই কষ্ট পেতো, একটুতেই চোখে জল গড়িয়ে পড়তো সেই মানুষটা হোঁচট খেতে খেতে উঠে দাঁড়ায়, কষ্টকে বস্তাবন্দী করে পাথর করে মনে রেখে দেয়। পাথরও হয়তো একটা সময় ভাঙ্গে, গলে যায় কিন্তু এই মানুষটার মন গলে না। কারণ এই মনটা কষ্টে লালিত, নিঃসঙ্গতার চাদরে পালিত, মিথ্যা কথায় মন ভাঙ্গনের সুতোয় গড়া…।।
এই মনটা কি এতোটা পাথর হতো যদি চেনা মানুষ চেনাই থাকতো…!!?? যদি হাতটা কেউ বাড়াতো, যদি কষ্টের মাঝে, একা থাকার মাঝে একটু কেউ ভরসা দিতো, কেউ একজন আপনার সঙ্গী হতো আমৃত্যু পথ চলার…!!
কাছের মানুষের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত আঘাত পেয়ে মাঝে মাঝে আপনার কাছে জীবনের সবকিছুকেই অর্থহীন শূন্য মনে হবে। সে শূন্যতা কিসের সে হিসাব আপনি মেলাতেই পারবেন না। এই শূন্যতা শুধু আপনার মনের চার দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বাইরের কেউ কখনো তা জানতে পারবে না, কখনো বুঝতেও পারবে না। আপনি কখনোই সেই শূন্যতা কাউকে বুঝতে দেবেন কি??
তখন আপনার খুব ইচ্ছা করে আকাশের তাঁরা হয়ে যেতে। দূর আকাশের ছোট্ট একটি তাঁরা। তখন ভাবতে ভালো লাগে মাঝে মাঝে মিটি মিটি করে জ্বলতে আবার অদৃশ্য হয়ে যেতে। এটাকে কেউ কেউ দুঃখ বিলাস বা ডিপ্রেশন বলতে পারেন, কিন্তু এইসব কিছু ইচ্ছে করলেই কি আপনার জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন? তাই মানিয়ে নিয়ে কষ্টের অথৈ সাগর বুকের ভিতরে চাপা দিয়েই চলতে হয় চেনা-অচেনা মানুষদের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে! আপনার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কাউকে দেখাতে যাবেন না, যে চেনা মানুষটির সবচেয়ে কাছে থেকে বিশ্বাসের অটল স্পর্ষ আপনার পাবার কথা ছিলো সেটি না পেলে বরং তাকে করুনা করুন। আপনি নিশ্চিত জিতবেন, এটাই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে অক্সিজেন হিসেবে কাজ করবে।
প্রচ্ছদ: আর্কিটেক্ট হুমায়রা হাবীব নবনী।
বনানী ঘোষ, খুলনা থেকে।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।
Leave a Reply