একটা ক্ষীণ আশা ছিলো। শ্বশুর বাড়ির পরিবারের সাথে মিলেমিশে থাকতে পারলে, অন্য সবার মন জয় করতে পারলে একদিন তাঁর বরও বুঝতে পারবে। কিন্তু হিসাব আরো কঠিন হয়ে গেলো বাচ্চা নেয়ার পর, স্বামীর মধ্যে ব্যবহারের পরিবর্তন তো এলোই না উল্টো শারিরীক সম্পর্ক থেকে বের হয়ে গেলো দুজন। স্বামীদের বশ মানাতে স্ত্রীদের অস্ত্র হিসেবে যেটি ধরা হয় বহ্নির ক্ষেত্রে সেই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোর স্বাভাবিক জৈবিক চাহিদা একইরকম থাকলেও বহ্নির স্বামীর সক্ষমতা লোপ পেলো ধীরে ধীরে। অন্তত এই একটি সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতে বিছানায় নিজে ছোট হয়েও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলো ও। কিন্তু এক রাতে শারিরীক সম্পর্ক করতে জোরাজুরি করার সময় এমন একটি নোংরা শব্দ উচ্চারণ করে বহ্নিকে অপমান করেছিলো ওর বর যে সেদিন থেকে স্বামীর কাছে ঘেষতেই নিজেকে অস্পৃশ্য লাগতে আরম্ভ করেছিলো।
ব্যাস, এভাবেই তো কেটে যাচ্ছিলো। বাচ্চা পালন আর সংসারের হাল ধরা। বাজার করা থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজনের দেখাশুনা, বাচ্চাদের স্কুল, টিউশনি, বাড়িভাড়া, রান্নাবান্না সবই করতে হয় বহ্নিকে। স্বামীর সাথে যৌন সম্পর্ক শেষ তাই এখন বহ্নি গৃহিণী থেকে ফুলটাইম গৃহকর্মীতে পরিণত হয়েছে! অদ্ভুত ব্যাপার হলো তবুও বহ্নির মাথায় সংসার ছেড়ে যাবার চিন্তা কোনদিন আসেনি। বরং পরিবারের খুব ঘনিষ্ট কয়েকজন, যারা প্রকৃতই বহ্নির ভালো চায় তারা কেউ কেউ পরাকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে দেহের ক্ষুধা মেটানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলো! সেটার অবাধ সুযোগও তৈরি ছিলো, স্বামীর পরিবারের ঘনিষ্ট এক বন্ধু দীর্ঘদিন পিছনে লেগে ছিলো বহ্নিকে রাজী করাতে।
ওসব বহ্নিকে কোনদিন টানেনি। ওসব টানলে বিয়ের আগেই অর্ধশত প্রেমিক জুটিয়ে ফূর্তি করতে পারতো সে। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক বাবাকে দেখে এসেছে মায়ের প্রতি ভীষণ কেয়ারিং, সেই ভাবনা থেকেই ভেবে নিয়েছে ওর অনাগত স্বামীও বাবার মতোই কেয়ার করবে, ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে! অথচ এখন চিন্তা করে ভেবে পায় না গত পঁচিশ বছরে ওর স্বামী একটি দিনের জন্যও ওর দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখেনি। এমন মানুষকে ছেড়ে যাওয়া ছাড়া এই অসহ্য অপমানের কি প্রতিকার আছে? অথচ তেমন ভাবনা আসেইনি কোনদিন, বহ্নির বড় বোনও বলেছে ডিভোর্স নিয়ে নে, ভালো ছেলের সাথে আবার বিয়ে দেবো! শুনেই এক কথায় না করে দিয়েছে ও, এক জীবনের এই সব কষ্ট মেনে নিয়েছে। এখানে আর কারো দায় নেই, কষ্ট নিয়ে হাসি মুখে বেঁচে থাকাটাই বহ্নির পরম ব্রত। মাঝে মাঝে যখন আর কিছুতেই সহ্য হয় না তখন বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে গুমরে গুমরে কাঁদতে থাকে। সে কান্নার কথা কেউ কোনদিন জানে না।
অবসরের অনেকটা সময় ফেসবুকে কাটে বহ্নির। অনেক বেশি বন্ধু নেই তবুও পরিবারের কয়েকজন ও স্কুল কলেজের বন্ধু বান্ধবীদের সাথে মেসেঞ্জারে কথা হয়। আর সবসময় কিছু উটকো প্রেমিক থাকেই, তাদেরও সামাল দিতে হয়, শেষ পর্যন্ত না পেরে ব্লকও মারতে হয়। প্রায়ই সেলফি তুলে আপলোড দেয়, বাইরে বের হলে ছোট ছেলেকে দিয়ে ছবি তুলিয়ে নেয়, ফেসবুকে কোন শিরোনাম ছাড়াই সেগুলো শেয়ার করে বেশিরভাগক্ষেত্রে। পরিবারের সকলের ভিতর থেকেই বহ্নির শ্বশুরের মৃত্যু শোক তিনমাসের মাথায় কিছুটা হালকা হয়ে উঠতে থাকলো। বহ্নির স্বামী ব্যবসার নিয়মিত কাজে মনোনিবেশ করলো এবং বাবার মৃত্যু শোক ভুলতে মদ খাওয়ার পরিমান ও মাতাল হবার মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে গেলো!
চলমান————–
লেখা: কিশলয় প্রান্ত
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।
গত পর্বের লিঙ্ক:
Leave a Reply