"আজ নেই বর্গী, নেই ইংরেজ, নেই পাকিস্থানী হানাদার-
আজ তবু কেনো আমার মনে শূন্যতা আর হাহাকার!
আজ তবে কি লাখ শহীদের রক্ত যাবে বৃথা ?
আজ তবে কি ভুলতে বসেছি স্বাধীনতার ইতিকথা।"
জনপ্রিয় কন্ঠ শিল্পী হায়দার হোসেনের গাওয়া গানটির উপরোক্ত অংশটি বিশ্লেষণ করলে এ কথা নিশ্চিত বলা যায় বর্গী, ইংরেজ, পাকিস্থানী হানাদার থেকে শুরু করে এই দেশ যারা শাসন ও শোষণ করেছে যুগে যুগে তাদের সম্মিলিত জীনের মিউটেশনে যে সংকর জাতিসত্ত্বার বিকাশ ঘটেছে সেই সংস্করণের ব্রান্ড নাম "বাংলাদেশী"। ডান হাতে তসবী জপতে জপতে বাম হাতে সুদ ঘুষের কারবারী করার মতো একমাত্র হাইব্রিড জাত আমরা! অলিতে গলিতে যতবেশি মসজিদ মাদ্রাসা মুসল্লি বৃদ্ধি পাচ্ছে সমানতালে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতির মহোৎসব। ডাহা মিথ্যা জোর গলায় বলতে এতোটুকুও কারো বাঁধে না, নিজে ফেরেশতা আর বাকি সবাই আস্তাগফিরুল্লাহ এমনইভাবে সুপারবাগ হয়ে উঠেছে আমাদের কীটসম রাস্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থা।
স্বচ্ছতা, সত্যবাদিতা, সরলতা, মানবিকতা, জনহিতকর কর্মকান্ড ইত্যাদি শব্দের ভান্ডার সংসদ আর মেঠো বক্তৃতায় বাগাড়ম্বর ও মুখভরা বুলি হিসেবে উচ্চারিত হয়। আর বাস্তবে ঠিক এর বিপরীত কর্মকান্ডগুলো আমাদের চোখে পড়ে। এমন অবস্থা হয়েছে কেউ এসে সুন্দর করে কথা বলতে শুরু করলেই কেমন যেন সন্দেহ দানা বেঁধে ওঠে মনে, মতলবটা কি এমন প্রশ্নের ভাঁজ পড়ে কপালে। যে যত বেশিবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তুলতে থাকে আমার মনে ততবেশি সন্দেহের উদ্রেক হতে থাকে। ধরেই নিই নতুন কোন ধান্ধায় এসব নান্দনিক শব্দ চয়ন করছে নিশ্চিত। জনগণের কল্যাণের চিন্তায় যার নাকি ঘুম আসে না তাকে আপনি অনায়াসে একালের রাজাকার তকমা লাগিয়ে দিতে পারেন।
মানুষ যেমন শাসকও হবে তেমন এটা আল্লাহর ওয়াদা! তাই ভুলে যান ভালো মানুষদের সমাজ ব্যবস্থার কথা। আমাদের জন্য দানব রাষ্ট্রই প্রাপ্য। দুঃখ করে লাভ নেই, ষড়যন্ত্রকারী খন্দকার মোশতাকরা এদেশের আইকন তাজউদ্দীন নন। মিল্টন সমাদ্দারই আমাদের সমাজের যোগ্য প্রতিনিধি, তাকে ধিক্কার না দিয়ে উপরের দিকে এক দলা থুথু ছিটিয়ে দিয়ে নিজের আয়নায় নিজের মুখটা দেখে নিন দয়া করে। আমার কিশোরবেলায় দেখেছি পাড়ার মা চাচীরা পাশের বাড়ির ঘুষখোর কর্মকর্তার স্ত্রীকে নিয়ে কানাঘুষা করতেন। ঘুষখোর কর্মকর্তাকে নীচু চোখে দেখা হতো একটা আমলে, মিথ্যাবাদীকে অপছন্দ করতো সকলে। সাধারণ মানুষ অন্যের সততা ও ত্যাগী মনোভাবকে সম্মান জানাতো, জ্ঞানীকে উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতো।
রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া যখন কোন নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায় তখন সেটিকে সুপারবাগ নামে অভিহিত করা হয়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নামকরা কতিপয় রেজিম এখন সুপারবাগ হয়ে দেশের সকল নষ্টদের প্রতিনিধিত্ব করছে। এই সুপারবাগদের আর কোন এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে প্রতিকার করার সুযোগ নেই, সরকারে বা রাজনীতিতে থাকা সংবেদনশীল ভালো মানুষদের ওরা ইতিমধ্যে গিলে ফেলেছে। তাই এখন আপনি পুতুল নাচের কাঠ পুত্তুলি, যেমনে নাচাও তেমনি নাচি অবস্থায় নিপতিত হতে বাধ্য। এই তো নব্বইয়েও ছাত্র জনতা পেশাজীবি শিল্পী সমাজের সম্মিলিত আন্দোলন প্রতিবাদ দেখেছি শাসকের অনাচারের বিরুদ্ধে। অথচ সেই প্রতিবাদী জনতার বৃহৎ অংশটি একদম নির্লিপ্ত হয়ে গেছেন। কালাকানুনের মারপ্যাঁচে কোন পত্রপত্রিকায় একটা ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন পর্যন্ত চোখে পড়ে না আজকাল। কবি, শিল্পী, লেখক, সাহিত্যিকগণকে একটা দেশের আত্মা বলা হয়ে থাকে। অথচ আজ হাজারো অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর একটি মানুষও অবশিষ্ট নেই। সবাই মিশে গেছি স্রোতের অনুকূলে, এক কাতারে, নষ্টের শীর্ষে, অধঃপতনের চূড়ান্ত শৃঙ্গে!
মানবতার ফেরিওয়ালাদের আর কেউ কি কোনদিন বিশ্বাস করতে চাইবে? ফেসবুক হলো এ যুগের ভন্ডদের মুখচ্ছবি, সবাই নিজের ভালো ভালো ছবি আর গল্পগুলো প্রকাশ করে। যে মানুষটি হরহামেশা মানুষ ঠকায়, মিথ্যাচার করে, আত্মীয়ের হক মেরে দেয় ফেসবুকে তার উপদেশ বাণী দেখে চক্ষু চড়ক গাছ হবার যোগাড় হয়। যিনি নীতি নৈতিকতার কোন ধার ধারেন না তিনিই ফেসবুকে নীতি কথা শুনিয়ে বিড়াল তপস্বী সেজে যান। এক কথায় বলা যায় ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমগুলো এখন মিথ্যাবাদী ও অভিনয়কারীদের আখড়া। সেই ফেসবুকে যখন কেউ বিপদাপন্ন মানুষের কল্যাণের কথা অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করে আর্থিক সহযোগিতার জন্য পোস্ট বুস্ট করতে থাকে তখন আপনাকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। ভালো মানুষদের দিন শেষ, যে যতবেশি ভালোমানুষি দেখাবার চেষ্টা করবে আপনাকে ততবেশি সন্দেহ প্রবন হতে হবে অন্যথায় ঠকে যাবার সম্ভাবনা শতভাগ।
চলবে -----------------
পল্লব খন্দকার
দৈনিক আলোকবর্তিকা।