সাধারণত ধর্মীয় ও অন্যান্য বিদ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা পবিত্র অঙ্গন হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে অধিকাংশক্ষেত্রে এই কথাটি এখন আর প্রযোজ্য নয়। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির গ্রাসে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যন্ত জর্জরিত। এ প্রসঙ্গে একটি সাধারণ বিশ্লেষণ দেখে নিই-
বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে দুর্নীতি আজ দুরারোগ্য ক্যান্সারের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিভিন্ন সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেকোন ধরনের দুর্নীতি একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুণগত মান নষ্ট করে এবং সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিগুলো বিভিন্ন ধরনের হয় যেমন ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বানিজ্য বা শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বানিজ্য, অবকাঠামো নির্মানের সময় চাঁদাবাজি। এছাড়া প্রতারণামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড যেমন জাল সনদ তৈরি করে ডিগ্রী বিক্রি, অতিরিক্ত ফি আদায়, অযৌক্তিকভাবে হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধি, উপবৃত্তি নিয়ে জালিয়াতি, অবকাঠামো, বেতন এবং শিক্ষা উপকরণের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিলের অব্যবস্থাপনা বা আত্মসাৎ প্রচলিত।
স্বজনপ্রীতি এবং পক্ষপাতিত্ব করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের চর্চা প্রায়ই মেধা-ভিত্তিক নিয়োগকে উপেক্ষা করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয় বা বন্ধুদের পক্ষ নেয়। বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে দুর্নীতির প্রসারে বেশ কয়েকটি কারণ বিদ্যমান যেমন-
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এরফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণমান হ্রাস পায়, সীমিত সম্পদের অসম বন্টনের কারনে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী সৃষ্টি করা হয়। সৃষ্ট বৈষম্যের কারনে কম সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ দুর্নীতি শিক্ষাগত বৈষম্যকে বাড়িয়ে তোলে এবং সামাজিক গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এতে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পায়, যার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি ব্যাপক বিভ্রান্তি এবং বিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়। স্বল্পশিক্ষিত জনবলের অদক্ষতার ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়ে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যকরভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা উচিত-
একটি কেস স্টাডি:
উপরোক্ত প্রসঙ্গে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলায় অবস্থিত খাটর রামানন্দকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিগত পরিচালনা কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি আব্দুস সাত্তার লস্কর এবং প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান যৌথভাবে দুর্নীতির মহাকাব্য রচনা করেছে তা যেন দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি। তারা নির্লজ্জভাবে বিদ্যালয়টির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে আঠারোটি সিলিং ফ্যান পর্যন্ত বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করার মতো জঘন্যতম অনিয়ম দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। আমাদের দূর্ভাগ্য যে এদের মতো হীন চরিত্রের মানুষেরাই এখন গ্রামীন সমাজের নেতৃত্বে রয়েছে। এমন চরিত্রহীন মানুষদের কাছে ভালো কিছু পাওয়ার আশা করা মহা বোকামী।
প্রতিটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি রাজনীতিকরণের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ হাসিল করতে শিক্ষাঙ্গন কেন্দ্রিক সর্বগ্রাসী দুর্নীতির উৎসবে মেতে উঠেছে গ্রামের মুখোশধারী নেতা পাতি নেতারা। বিশেষত একেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চক্রের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। এসব বিষয়গুলো প্রতিরোধের জন্য সরকারের যে সকল দপ্তর রয়েছে এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদেরকেও আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে হাত করে নেয়। এলাকার সবাই জানে কোন পদে কে কতো টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছে, কে কোন নেতার সুপারিশে অবৈধভাবে সুযোগ পেলো সেসব নিয়েও চায়ের দোকানে চলে আড্ডা। কিভাবে যোগ্য প্রার্থী টাকার কাছে হেরে গিয়ে বঞ্চিত হলো তা নিয়েও কেউ কেউ আফসোস করে। কিন্তু কোন কিছুরই পরিবর্তন হয় না, সমাজের সবাই এমন মহা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। শুধু বঞ্চিত ব্যক্তি একা একাই গুমরে মরে, অন্যদিকে অযোগ্য নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা "চোরের মায়ের বড় গলা" করে সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে নির্লজ্জের মতো ঘুরে বেড়ায়।
এসব নির্লজ্জ ব্যক্তিরা কত টাকার বিনিময়ে কোন পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার হিসাব প্রকাশ্যেই দিয়ে থাকে। নির্ভরযোগ্য সূত্র মারফত জানা গেছে যে খাটর রামানন্দকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিগত পরিচালনা কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি আব্দুস সাত্তার লস্কর এবং প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান সিন্ডিকেট সতেরো লক্ষ টাকার বিনিময়ে কেরানি পদে নিয়োগ দিয়েছে! একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে কেরানি পদে নিয়োগেই এই পরিমাণ টাকার লেনদেন দেখে রীতিমতো তাজ্জব বনে যেতে হয়! উল্লেখিত সূত্র আরও জানিয়েছে যে পরিচালনা কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি আব্দুস সাত্তার লস্কর এবং প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর প্রধান শিক্ষক এ সকল নিয়োগ দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে স্বীকার পর্যন্ত করেছে।
এলাকাবাসী খাটর রামানন্দকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিগত পরিচালনা কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি আব্দুস সাত্তার লস্কর এবং প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাহিদুল হাসানের সকল দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অরাজনৈতিক সরকারের প্রধান উপদেস্টা ডঃ ইউনুস সাহেবের অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের মেয়াদের ভেতর উল্লেখিত সকল প্রকার দুর্নীতির তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানিয়েছে বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ ও সচেতন এলাকাবাসী।
সংকলনে: দৈনিক আলোকবর্তিকা।