বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর জনাব আয়ুব হোসেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নিয়ম না মেনে, নিয়োগ জালিয়াতি করে ল্যাব অপারেটর পদটি বাগিয়ে নিয়েছেন।
মূলতঃ ২০১৪ সালের পর থেকে তার উত্থান শুরু হয়, ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের সাথে উঠাবসার মধ্যে দিয়ে। নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে ২০২১ সালে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পেয়ে প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল মাজেদ সাহেবের সাথে সখ্যতা তৈরি করে বিদ্যালয়ে মূল বিজ্ঞান শিক্ষক বসিয়ে রেখে নবম দশম শ্রেণির ক্লাস নেয়া শুরু করেন। জড়িত হন প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে। এসব অভিযোগ ইতোমধ্যে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তদন্ত শুনানিতে তা প্রমাণিত হয়েছে।
জনাব আয়ুব হোসেনের হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তার বাবা পেশায় দিনমজুর, তিনি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তার আরেক ছোট ভাই শরীফুল বেকার। কয়েকবছর পূর্বে তাদের ছিল টিনশেড বাড়ি। কিন্তু এখন টাইলস করা দোতলা সুরম্য অট্টালিকার সামনে হরিণের নান্দনিক প্রতিকৃতি। ভেতরে এসির ঠান্ডা বাতাস। যেখানে দেখা যেত রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা।
আয়ুব হোসেন এবং তার বেকার ছোট ভাই চড়েন দুটি দামী মোটরসাইকেলে। নুতন মোটরসাইকেল কিনে ফেসবুকে পোস্ট দেন স্বপ্ন পুরণ হওয়ার।
তাঁর হঠাৎ ধনী হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, মূলতঃ ল্যাব অপারেটরের বাইরে তিনি সেজেছেন মানবতার ফেরিওয়ালা। “মানবতার তরঙ্গ” নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলে হাতিয়ে নিয়েছেন অর্থ। স্থানীয় বহু মানুষের কাছ থেকে দাতব্য সংস্থার টিউবওয়েল বসিয়ে দেয়া, ত্রাণ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায় যে, আয়ুব হোসেন তাদের আশা দিয়ে রেখেছেন যে, টাকা ফেরত দেবেন। সুতরাং টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি নয়।
আয়ুব হোসেনের বাড়ির পাশের মসজিদ পাতাকাটা হযরত মুহাম্মদ স. জামে মসজিদ। এই মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আয়ুব হোসেন। মসজিদের কাজ ও আয়ুব হোসেনের বাড়ির কাজ একইসাথে চলমান ছিল। অভিযোগ আছে – মসজিদের নামে বাকিতে নির্মাণ সামগ্রী কিনে তিনি নিজের বাড়ি নির্মাণের কাজে লাগিয়েছেন। সেসময়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত গণিত শিক্ষক জনাব মোঃ আবুল কালাম এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সঠিক হিসাব দিতে বলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে সেই প্রবীণ সভাপতিকে হয়রানি করা হয় এবং আয়ুব হোসেন চুলচেরা হিসাব প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন। স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে জনাব আবুল কালাম সাহেবকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। আত্মসম্মান বজায় রাখতে তিনি সাথে সাথে পদত্যাগ করেন। জনাব আবুল কালাম অভিযোগ করেন, “আয়ুব হোসেন সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন কোনো আয়ব্যয়ের হিসাব রাখা হয়নি। মসজিদের কাজ চলাকালে যে টাকা আয় হয়েছে ধারণা করছি তাতে কাজ সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার কথা, তবু আয়ুব হোসেন অনেক টাকা ঘাটতি দেখিয়েছেন।”
জনাব আয়ুব হোসেন মানবতার তরঙ্গের ব্যানার দেখিয়ে উচ্চবিত্ত ডোনারদের নিকট থেকে ঈদ উল আজহার সময় গরু কুরবানির টাকা নিয়ে কোন গরু কুরবানি করেননি। এলাকার যারা গরু কুরবানি দিয়েছেন তাদের কাছে স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়ে গোশত কাটাকাটি করার কাজে সাহায্যের নামে সেখানে মানবতার তরঙ্গের ব্যানার টানিয়ে সেটিকে মানবতার তরঙ্গের গরু কুরবানি বলে প্রচার করেন। বাস্তবে কোনো গরু কুরবানি না দিয়ে ছাগল কুরবানি দিয়ে তা গরীর ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করেন। আয়ুব হোসেনের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রই যেন প্রতারণায় ভরা।
এ ব্যাপারে জনাব আয়ুব হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা যখন টিউবওয়েল বসিয়েছি গ্রাহক ৫০ শতাংশ খরচ দিয়েছে এবং আমরা ৫০ শতাংশ খরচ দিয়েছি। কোনো গ্রাহক আমার কাছে টিউবওয়েল বসানো বাবদ টাকা পাবে না। মসজিদের হিসাবের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি আয় ব্যয়ের পুরো হিসাব মাইকে ঘোষণা করেছি এবং সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব আছে।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ জনাব আয়ুব হোসেন আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। একজন ল্যাব অপারেটর এর এত টাকার উৎস কী ? তাদের বিশ্বাস দুদকের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত হলে তার দুর্নীতির সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
লেখা: মোঃ রবিউল ইসলাম।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।
Leave a Reply