ফসলের জমিতে বালাই দমনের জন্য কৃষক ভাইয়েরা নানান রকম বালাইনাশক আজকাল হাতের নাগালেই পেয়ে যান এবং ব্যবহারও করেন। খুব যে জেনে, বুঝে অর্থাৎ কোন কীটপতঙ্গের জন্য কোন কীটনাশক, কখন, কতখানি, কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে তা জেনেই যে ব্যবহার করছেন, এমনটি কিন্তু না। ফলে ব্যবহার করা কীটনাশকের বেশিরভাগই কার্যকরী হয় না বরং যা হয় তা হলো অর্থের অপচয়, মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং জমির স্বাস্থ্যের অবনতি এবং তা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সহায়তায় এবং দাতা সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পের কৃষকেরা উত্তম কৃষি চর্চা, প্রতি বছর একই ফসল আবাদ না করে ভিন্ন ভিন্ন ফসল আবাদ করা, নানান রকম আধুনিক কলাকৌশল যেমন-ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার, নানান রঙের আঠালো বোর্ড ব্যবহার, জৈব বালাইনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো জৈব ব্যবস্থাপনায় বালাই দমনকারী কৃষকের সংখ্যা খুব বেশী না।
জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে যারা কেবল নিজেদের প্রয়োজনে উৎপাদন করে (Subsistence) এবং যারা নিজেদের প্রয়োজনে এবং বিক্রি করে আয়ের জন্য চাষ করে ( Semi- Subsistence) চাষিদের চেয়ে বানিজ্যিকভাবে (Commercial) চাষাবাদকারী চাষিরা নানান রকম সমস্যার কথা বলেন। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে সময়মত এবং প্রয়োজনমত জৈব বালাইনাশক না পাওয়া, পরিমানে অনেক বেশি লাগা এবং ব্যবহারের পর আশানুরূপ ফলনও না পাওয়া। তারা এটাও বলেন যে, কৃষকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাবও একটা বড় বাঁধা। সব কৃষক সমন্বিতভাবে বালাই দমনে পদক্ষেপ না নেয়ার কারনে বালাইদমনে কাংখিত ফলাফল পাওয়া যায় না। আর তাই অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ব্যবহার বাড়ছে, সাথে বাড়ছে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে People, Pets এবং Pest আমাদের খাদ্যকে অনিরাপদ করার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখে। আমাদের বেশীরভাগ কৃষক জানেই না তাদের ব্যাক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা, তাদের পোশাক, তাদের হাতের জীবানু উৎপাদিত ফসলকে অনিরাপদ করতে পারে। মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ – প্রত্যঙ্গে নানান জীবানু বিশেষ করে Staphylococcus নামক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে । খাদ্য প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত প্রায় অধিকাংশ মানুষই এ ধরনের জীবানু বহন করে। তাই উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত এসব মানুষদের নিরাপদ – অনিরাপদ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো খুব প্রয়োজন।
ব্যাক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা ছাড়াও আমরা দেখি আমাদের চাষের জমি এবং মাছ চাষের খামারগুলো সুরক্ষিত না। চাষের জমি এবং মাছের খামারগুলোতে মানুষ এবং বিভিন্ন প্রানীর অবাধ বিচরণ প্রত্যক্ষ করা যায়। গরু, ছাগল, কুকুর এমনকি মানুষও চাষের জমি এবং মাছের খামারের পাড়ে বা জমির আইলে মল-মূত্র ত্যাগ করে। সঠিকভাবে বায়ো সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা নেয়া হয় না। ফলে আমাদের ফসল নানান রকম জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে যায়।
ফসল বিশেষ করে শাক-সবজি এবং ফল-মূল আহরণের ( Harvest) এর পর রাস্তার পাশে খোলা স্থানে, মাটিতে স্তুপ করে রাখা হয়। ফসল আহরণের পর এভাবে সরাসরি মাটিতে রাখার ফলে শাক-সবজি এবং ফল-মূল খুব সহজেই স্যালমোনিলা (Salmonella) ব্যাকটেরিয়া জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে যায় এবং আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারন হয়ে দাঁড়ায়।
আরেকটা বিষয় হলো শাক-সবজি এবং ফল-মূল আহরণের পর পরিষ্কার করা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পরিষ্কার করার জন্য নিরাপদ পানি ব্যবহার করা হয় না। যেমন ঢাকা শহরে ভ্যান গাড়িতে বিক্রি হওয়া শাক-সবজি এবং ফল-মূল অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিদিন ভোরে কূড়িল বিশ্ব রোড, মেরাদিয়া, বনশ্রী’র লেকের নোংরা পানিতে ধুয়ে ভ্যানে সাজাতে দেখা যায়। আমরা বাজার কিংবা পথের পাশে অথবা ফেরি করা ভ্যান থেকে পরিষ্কার চকচকে শাক-সবজি এবং ফল-মূল ক্রয় করলেও সেগুলো নিরাপদ নাও হতে পারে। নোংরা পানি দিয়ে পরিষ্কার করা শাকসবজি এবং ফল-মূলে জীবানু বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল, ভারি ধাতু থাকার সম্ভাবনা থেকেই যায় তা সেগুলো যতই চকচকে দেখা যাক না কেন।
নিরাপদ শাক-সবজি এবং ফল-মূল এর পাশাপাশি নিরাপদ দুধের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আসলে কতটুকু নিরাপদ দুধ পান করতে পারছি?
(চলমান)
মোঃ মাকসুদুর রহমান
কৃষি উৎপাদন, সরবরাহ শিকল ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ।
ই-মেইলঃ maksudurrahman1363@gmail.com
Very good but we did not get such type food that can be consume.