চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অথবা বিক্রেতার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে আমরা অনেক সময় নিশ্চিন্তে অর্গানিক পণ্য ক্রয় করি এবং ভাবতে ভালোবাসি এই কলাটা অর্গানিক খাচ্ছি, এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয়। উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞা অনুযায়ী “জৈব খাদ্য বা অর্গানিক ফুড হল সেই সব খাবার যা উৎপাদনে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার, এন্টিবায়োটিক, হরমোন বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। জৈব সার ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত খাদ্য হল জৈব খাদ্য।”
বিভিন্ন অর্গানিক পণ্য বা খাদ্যের মধ্যে আমরা ঢেঁকিছাঁটা চাল কিংবা গ্রামের বাড়িতে উন্মুক্তভাবে চরে বেড়ানো দেশি মুরগি, জৈব সার ব্যবহার করে উৎপাদিত নানারকম সব্জি ও ফল, খাবার তেল বা রান্নার মশলা সংগ্রহ করার চেষ্টা করি। কারন আমাদের দেশে প্রচলিত নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য সমূহ উৎপাদন করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়। এছাড়া হাইব্রিড ফসল ও জিএমও জাত উৎপাদন করা হয় যা জমি ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
কৃষিজমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের রেসিডিউ বা অবশিষ্টাংশ আমাদের খাবারের ভেতরে ঢুকে যায়। গবাদি পশু-পাখির উৎপাদন বাড়াতে ব্যবহার করা হয় গ্রোথ হরমোন; এছাড়া ফল, ডিম, মাছ, মাংস—সবকিছুর উৎপাদনেই যথেচ্ছ এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এছাড়া ফলমূল পাকাতে বা পচে যাওয়া ঠেকাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় শতভাগ। এই কৃত্রিম ও রাসায়নিক উপাদানগুলো আমাদের শরীরে ধীরগতিতে বিষের মতো কাজ করে। কৃত্রিম সার, রাসায়নিক দ্রব্য, এন্টিবায়োটিক, ফরমালিন ইত্যাদির ব্যবহারে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের ওপর রাসায়নিক ও কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আরও বেশি ক্ষতিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়।
তাহলে আমরা অর্গানিক পণ্য বা খাবার কিভাবে পেতে পারি? আমি একজন সাধারণ ক্রেতা হিসেবে কিভাবে বুঝবো আমার ক্রয় করা পণ্যটি সত্যিই অর্গানিক? অর্গানিক পন্য বা খাদ্য দাবী করা হলে তা অবশ্যই শতভাগ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদন করতে হবে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণেও কোনো ধরনের কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা যাবে না। অর্গানিক পণ্য উৎপাদন ব্যবস্থা হতে হবে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব যা মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধ করবে। এই সবগুলো বিষয় নিশ্চিত করে আমাদের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে অর্গানিক পণ্য উৎপাদন করা এক কথায় অসম্ভব। পৃথিবীতে কিছু সংস্থা কঠোর অডিট করে অর্গানিক সনদ দিয়ে থাকে যেগুলোর শর্ত পালন করা বাংলাদেশে প্রায় অসম্ভব।
তাই বলে কি থেমে গেলে চলবে?
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘সেফ ফুড অ্যাক্ট ২০১৩’ পাস করা হয়েছে। এর ৩১ নম্বর ধারায় নিরাপদ খাদ্য তথা ফাংশনাল ফুডের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘ফাংশনাল ফুডের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এতে বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদান থাকতেই হবে। ফাংশনাল ফুড বিশেষ ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় বায়ো-কেমিক্যাল প্রসেসে স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এই বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদানগুলো নন-টক্সিক হতে হবে। ফাংশনাল ফুড যে নিরাপদ ও কার্যকর, তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকতে হবে। এই খাবারগুলোর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে না।’ তাই অর্গানিক না বলা গেলেও আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাপনার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে সীমাহীন স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় হতে কিছুটা মুক্তি পেতে পারি।
অর্গানিক ফুড এমন প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করতে হয় যেখানে রাসায়নিক বা কৃত্রিম সার ও কীটনাশক, ফুড এডিটিভস, বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রক, ইরেডিয়েশন, জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম (জিএমও) পদ্ধতিতে বা এর মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করা হয় না। গুড এগ্রিকালচারাল প্রাকটিস বা উত্তম কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে পারি। অন্যথায় খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ে। ব্রঙ্কাইটিসসহ শ্বাসযন্ত্রে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। অনেকেই কিডনি ও লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া রাসায়নিক সার ও কীটনাশক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নিরাপদ খাদ্য বা কৃষি পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই নানাবিধ গবেষণা অব্যাহত আছে। সেই গবেষণার অংশ হিসেবে “Bio-Organic Fertilizer: A Green Technology to Reduce Synthetic Nitrogen and Phosphorus Fertilizer for Rice Production” শিরোনামে একদল বাংলাদেশী গবেষক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। এই বায়ো অর্গানিক সার ব্যবহার করে ধান উৎপাদনে যদি রাসায়নিক সারের ব্যবহার বন্ধ করে বা সীমিত করা যায় তাহলে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষি খাতে তা হবে এক যুগান্তকারী সাফল্য।
আগামী পর্বে উক্ত গবেষণাটির ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পল্লব খন্দকার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩
mazhabkh93@gmail.com
Why?? Having bish (toxic) with long term physical hazard.
[…] […]