— আতাউর রহমান মিটন
সহ-সভাপতি, বিসেফ ফাউন্ডেশন।
দ্বিতীয় পর্ব:
সচেতন হতে হবে? মুখ খুলতে হবে? দাবী জানাতে হবে। যে খাদ্য আমাদের দেহে পুষ্টি যোগায়, আমাদের মেধার বিকাশ ঘটায় এবং আমাদের আবেগ ও বিবেচনাবোধকে প্রভাবিত করে সেই খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশনের সাথে জড়িত জনগোষ্ঠীকে সচেতন ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় উপায়েই সেটা করতে হবে। পারিবারিক পর্যায়ে খাদ্য রান্না, পরিবেশন ও সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানতে ও জানাতে হবে। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে এত কিছু কাজ করবে কে? শুধুমাত্র গুটি কয়েক চাকুরিজীবী কর্মকর্তাদের দিয়ে কি এই মহা কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব? আমি বিশ্বাস করি এর জন্য এলাকায় এলাকায় প্রতিশ্রুতিশীল স্বেচ্ছাব্রতী ব্যক্তিদের সংঘবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন। রোটারী ক্লাব বা বিসেফ ফাউন্ডেশন এর ভূমিকা হোক সেই ধরণের প্রতিশ্রুতিশীল স্বেচ্ছাব্রতীদের উজ্জীবিত ও সংগঠিত করা। উজ্জীবিত রোটারিয়ানদের কাছে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আমরা বিশ্বাস করি ‘নিরাপদ খাদ্য আইন—২০১৩’ প্রণয়ন সরকারের সদিচ্ছার পরিচয় বহন করে। জনআকাঙ্খার প্রেক্ষিতে প্রণীত আইন প্রণয়নের পরে ১০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রকৃতিতে বেড়েছে অনুজীবীয় দূষণ। বিভিন্ন সময়ে এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রণীত নানাবিধ আইন ও বিধিসমূহের কারণে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সধ্যে সমন্বয় সাধন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু বাস্তবিক প্রয়োজনে বর্তমানের নিরাপদ খাদ্য আইনটি নিয়ে পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজনে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন মনে করি। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধি এবং নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কর্মরত সংগঠন—প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই পর্যালোচনা অবিলম্বে শুরু করা প্রয়োজন। রোটারী ক্লাব জনস্বার্থে এ ধরণের পর্যালোচনা সভা আয়োজনে ‘ক্যাটালিষ্ট’ এর ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।
‘নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনে প্রকৃত সমস্যা কোথায়’ তা নির্মোহ বিশ্লেষণ করলেই শুধু চলবে না। পরিবর্তনের জন্য সবাইকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে তা শুরু করার ক্ষেত্রে রোটারিয়ানগণ ‘রোল মডেল’ হবেন বলেই আমি আশা করি। তারা জাতিকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে পারে। রোটারী ক্লাবগুলো নিজেরা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে এবং পাশাপাশি বিসেফ ফাউন্ডেশন বা এরকম আরও যে গোষ্ঠীগুলি কাজ করছে তাদের সহায়তা করতে পারে। নিরাপদ খাদ্যের পক্ষে ওকালতি বা এ্যাডভোকেসি কার্যক্রম জোরদার করতে পারে।
পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষতমতা বৃদ্ধি এবং অর্থপ্রবাহ বাড়াতে হবে। এই কাজে জড়িত অংশীজনদের ‘রেয়াতি হারে’ ঋণ প্রদান করা হলে অবিস্মরণীয় পরিবর্তন আসবে। দেশের যুব সমাজ এই খাতে আসতে উৎসাহিত বোধ করবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, অর্জিত হবে সরকারের পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার। এই কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য সরকারের উদ্যোগে অবিলম্বে ‘নিরাপদ খাদ্য ফাউন্ডেশন’ গঠন করা প্রয়োজন। যুগের চাহিদা ও বাস্তবতা অনুযায়ী গবেষণা পরিচালনা ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে বেসরকারি পর্যায় বা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সহায়তা করতে পারে এই ফাউন্ডেশন।
প্রকল্পভিত্তিক গুটিকয়েক কর্মসূচী নয় বরং সকলকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যাতে ‘বাদ যাবে না কেউ’। মূল কথাটা হচ্ছে, গন্ডির বাইরে বেরিয়ে চিন্তা করা। ফুটো পাত্র দিয়ে পানি সেচলে যেমন ফল হয় না, ঠিক তেমনি পুরনো গতানুতিক কায়দা—কানুন বহাল রেখে নিরাপদ খাদ্য ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা কঠিন। আমি রোটারী ক্লাবকে এই মহতি সম্মেলন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের এই শুভ উদ্যোগ অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করুক। প্রত্যাশা করি, নিরাপদ খাদ্যের জন্য আসুন আমরা কাজ করি সবাই মিলে, সবার জন্য।
শরীরের সুস্থতাকে হলিষ্টিকভাবে দেখতে হবে। খাদ্যের ভূমিকা সেখানে মুখ্য। আমাদের খাবারের প্লেটে বিষাক্ত ও দূষিত উপাদান মিশে থাকবে, অজান্তে প্রবেশ করবে আমাদের শরীরে আর ধীরে ধীরে স্লো পয়জনিং এর মত করে আমাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে সেটা হতে দেয়া যায় না। তাই, কেবল গালভরা কথার ফুলঝুরি নয়, চাই বাস্তবানুগ তৎপরতা। চাই সমন্বিত উদ্যোগ। সকলকে অশেষ ধন্যবাদ।
লেখার উৎস্য: District Seminar on Safe & Nutritious Food 2023: What Rotarian can do? Organized by Rotary Club of Gulshan Lake City.
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।