স্কুল শিক্ষায় রান্নার বিষয়টা অবশ্যই জরুরী সেটা যদি হয় কমার্শিয়াল –
নিজ নিজ বাড়ীতে ভাত, তরকারী, আলুভর্তা, ডিমভাজী যে যেভাবে করে খাক, সমস্য নেই, কিন্তু বানিজ্যিকভাবে রান্নার কিছু মানদন্ড বা স্ট্যান্ডার্ড আছে সেটা শিখতে হবে। তা না হলে সারা দুনিয়া চলবে একদিকে আমরা চলে যাবো আরেকদিকে। ফুড বিজনেস দুনিয়ার মধ্যে অনেক বড় বিজনেস। নিজ নিজ বাড়ীতে কে কিভাবে খাবে সেটারও একটা সাধারণ গাইডলাইন আছে এখানে, সেখানে মোটা দাগে কিছু কথা বলা আছে, যেমন, একজনের একটা খাবারের থালায় অর্ধেকটা থাকবে সবজী ও ফলমূল, বাকী অর্ধেক থাকবে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার। কোমল পানীয় বাদ দিয়ে শুধু পানি, অন্যান্য পানীয় বাদ দিয়ে ফলের রস। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, তাপমাত্রা, ইত্যাদি সাধারণ কিছু বিষয় যা সবখানে সবার জন্য প্রযোজ্য।
আর ক্লাশে কী পড়াবে?
ভাইরে ভাই, এতো সুন্দর মানসম্পন্ন যে একটা রান্না শিক্ষার বই হতে পারে তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। আমি এদের দশম, একাদশ আর দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, অংক আর কমার্শিয়াল কুকিং বইগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করছি আজ ছয়মাস ধরে, সাথে এগুলোর ডিজিটাল কন্টেন্ট। অসাধারণ! লেখক প্রায় সবাই কানাডা ও আমেরিকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষার সাথে জড়িত, তবে শুধু কুকিং এর বইয়ে স্কুলশিক্ষকদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীগন জড়িত। এটা দেখে বুঝলাম এটার গুরুত্ব কতোটা বেশী দেয়া হয়েছে।
কুকিং বিষয়টা মোটেও খারাপ নয়, তবে সেটা কিভাবে এবং কতটুকু জ্ঞান দিয়ে পড়ানো হচ্ছে সেটাই বড় বিষয়।
এই বইয়ের মধ্যে আছে, একটা ফুড ইন্ডাস্ট্রীতে চাকরী খোঁজার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে বিশ্ব মানের ফুড বিশেষজ্ঞ কিভাবে হওয়া যায় সে বিদ্যা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে গেছি তবুও একটা চাকরীর দরখাস্তে কী লিখতে হয় আর তার জন্য নিজের বায়োডাটা কিভাবে তৈরী করতে হয়, আর কোথায় কোথায় চাকরী খুঁজতে হয় জানতে পারনি, আর এই বইটা এসব দিয়েই শুরু করা হয়েছে।
লেখার মতো অনেক কথা জমা হয়েছে এখানকার স্কুলশিক্ষা নিয়ে, প্রিকে- অষ্টম এলিমেন্টারী স্কুলে আর নবম – দ্বাদশ হাইস্কুলে পড়ানো হয়। হাইস্কুল বা কলেজিয়েট স্কুলে দশম – দ্বাদশ শ্রেণি হলো হাইস্কুল ডিপ্লোমা। এই তিন ক্লাশে ২৪-৩০টা বিষয়ে পাশ করলে তাকে দেয়া হয় হাইস্কুল ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট বা মার্কশীট। এই ডিপ্লোমা ডিগ্রী শেষে একজন মুটামুটি একটা চাকরী বা ব্যবসা শুরু করতে পারে।
সেটা কিভাবে সম্ভব?
চাকরী খোঁজা, দরখাস্ত করা, ইন্টারভিউ দেয়া, ও কর্মস্থলে কাজ করতে পারার মতো মুটামুটি জ্ঞান এর মধ্যেই হয়ে যায়। রেজাল্ট নিয়ে পাগলামীর কোনো প্রয়োজনই নেই। তবে যারা ভার্সিটি ভর্তি হতে চায় তাদের জন্য রেজাল্টের গুরুত্ব আছে।
কমার্শিয়াল কুকিং, কোনো আবশ্যিক কোর্স নয়, তবে খুব দরকারী এই বুঝ থেকে মুটামুটি সবাই এটা নিয়ে থাকে। কোর্সের মধ্যে ”ফুড সেফ” একটা অনলাইন ট্রেনিং আছে। এটা শেষে একটা সার্টিফিকেট দেয়া হয় যেটা ছাড়া ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরী পাওয়া যায় না। বইটা ঘাঁটতে গিয়ে বারবার বিস্মিত হচ্ছিলাম, পরিচিত বিষয়ের মধ্যে ভাত কিভাবে রানতে হয়, রুটি/নুডুলস কিভাবে বানাতে হয়, সালাদ কিভাবে বানাতে হয়, মুরগী কিভাবে কাটতে হয়, আলুভর্তা কিভাবে বানাতে হয়, এমনকি রান্নার চাকু কতো প্রকার ও কিভাবে তা চালাতে হয়, ইত্যাদি অনেক কিছুই আছে এটার মধ্যে। শুনলে হয়তো হাসি পাবে, কিন্তু দেখলাম হ্যাঁ, এটাই ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড এবং আমাদেরকে এটাই শিখতে হবে। আর এসব জ্ঞানের একটা বড় অংশ এসেছে ফরাসী বিজ্ঞানী ও পেশাজীবীদের কাছ থেকে।
এতোসব পড়াবার জন্য স্কুলের আয়োজন কতটুকু আছে। ভাইরে, কী আর বলবো সে এক ইলাহী কান্ড। একটা স্কুলে পাশাপাশি বড় দুইটা ক্লাশ রুম, তার মধ্যে আটটা ইলেকট্রিক কিচেন, সর্বক্ষণ ইলেকট্রিসিটি, ইন্টারনেট, সেন্ট্রাল এসি, হিটিং, ও সাউন্ড সিস্টেম, মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টর, বুকসেল্ফ, একাধিক, রেফ্রিজারেটর ও ফিজার। একদিন একটা তেলাপোকা দেখতে পাওয়া গেলে সেটা নিয়ে তুলকালাম হয়ে গেল। আশা করা যায় আর দেখা যাবে না। আমরা হয়তো এক কথায় এটাকে উড়িয়ে দেবো এই বলে যে, আমাদের এতোশত করার রিসোর্স নেই। আমি বলবো আছে।
এতসব দেখি, শুনি আর ভাবী- হায় ! এগুলোর চেয়ে আমাদের মা – খালাদের রন্ধন জ্ঞানের কমতি ছিল কোথায়! হতভাগা আমরা, সেগুলোকে বই কিতাবে লিখে সারা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরতে পারিনি।
সংগ্রহ: ইকবাল আহমেদ এর ফেসবুক পেজ থেকে। উল্লেখ্য, তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং কানাডা প্রবাসী।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।
Leave a Reply