দৈনিক আলোকবর্তিকায় বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুলের দুর্নীতির খবর প্রকাশ হওয়ার পর এবার অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে আগামী ৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৪, মঙ্গলবার মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে বিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সচেতন অভিভাবকবৃন্দ, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
তারা এবার বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুলের হেড মাস্টার জনাব আব্দুল মাজেদ সাহেবের (যার প্রিন্সিপাল হওয়ার যোগ্যতা নাই তবু ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে রেজুলেশন তৈরি করে প্রিন্সিপাল বনে গিয়েছেন যদিও বেতন পান হেডমাস্টারের স্কেলে) বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ তুলেছেন -
১. নিয়োগের শর্ত উপেক্ষা করে, ডামি নিয়োগ বোর্ড তৈরি করে (যেখানে ডামি প্রার্থীদের কারোরই নিয়োগের শর্তানুযায়ী যোগ্যতা ছিলনা। ফলে আবেদনপত্র প্রাথমিক সর্টিং এ বাদ পড়ে যাওয়ার কথা) আয়ুব হোসেনকে ল্যাব অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া।
২. মূল শিক্ষকদের বসিয়ে রেখে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত ল্যাব অপারেটরকে দিয়ে বিজ্ঞান শাখার ক্লাস নেয়া। এবং কিছু বললে উদ্ধত্য দেখিয়ে নিজের দাম্ভিকতা বজায় রেখে শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ।
৩. একের অধিক থার্ড ক্লাস পাওয়া (নিয়োগ শর্তে শিক্ষাজীবনে একের অধিক থার্ড ডিভিশন গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও) ব্যক্তির নিকট থেকে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে কলেজের লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দেয়া। কেবলমাত্র বেনেফিশারি না হলে এইধরনের সুযোগ দেয়া কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
৪. বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুলে পড়েই বার বার এস এস সি ফেল এসএসসি ও এইচএসসি তে (যা নিয়োগ শর্তের স্পষ্ট লংঘন) থার্ড ক্লাস কোরিয়া প্রবাসী শ্রমিককে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দান।
৫. অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ল্যাব অপারেটরকে দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করানো (যা শিক্ষকদের তদন্ত কমিটি দ্বারাই প্রমাণিত) ও আর্থিক সুবিধা লাভ। ল্যাব অপারেটরের বাড়িতে কিছুদিন পর পর দাওয়াত খেতে যাওয়াটাকে আমরা মনে করি অবৈধ সুবিধা করে দিতেই আব্দুল মাজেদ ও আয়ুব হোসেনের এই দহরমমহরম।
৬. স্কুলের আবেগ মিশ্রিত ঐতিহ্যেধারণকারী বড় বড় বৃক্ষ বিক্রি করে দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা।
৭. মাজেদ সাহেবের নিজের সনদসমূহেও অসংগতি থাকার অভিযোগে অভিভাবক সদস্য কর্তৃক তার বিরুদ্ধে পূর্বে মামলা হওয়া এবং টাকার বিনিময়ে সেই মামলা বাদী কর্তৃক তুলে নেয়ার ব্যবস্থা করা। তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের ডিগ্রি কোর্স করেছেন বলে স্কুলের ওয়েবসাইটে যে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই সার্টিফিকেট যাচাই করা যায়নি। সুতরাং এই সার্টিফিকেটের সঠিকতা যাচাই করার জন্য অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন।
৮. প্রিন্সিপাল হওয়ার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে রেজুলেশন তৈরি করে প্রিন্সিপাল ডেজিগনেশন ব্যবহার করা এবং নিজেকে প্রিন্সিপাল দাবি করা।
৯. তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কোনো শিক্ষক কোনো কথা বললে তাকে হুমকি দেয়া এবং বিনা অপরাধে বিরুদ্ধগামী শিক্ষকের টাইম স্কেল আটকে দেয়া।
১০. স্কুল চলাকালীন সময়ে ক্লাস বন্ধ রেখে ছাত্র ছাত্রীদের কোচিং এর বিজ্ঞাপন দিতে আসা কোচিং টিচারদের সাথে বসতে বাধ্য করা। ইসরাফিল নামক একজন ছাত্র প্রতিবাদ করলে তাকে দুই ঘন্টা ধরে মানসিকভাবে হয়রানি করা।
১১. অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ল্যাব অপারেটরের বিরুদ্ধে নারী ঘটিত গুরুতর অভিযোগ পেয়েও ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করা এবং তাকে স্ব পদে বহাল রাখা।
১২. ১২ (বারো) জন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের সময় প্রত্যেকের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে গুরুতর অভিযোগ। (যা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে জনমনে একান্ত বিশ্বাস)
১৩. ছাত্র ছাত্রীদের জন্য স্কুলের একমাত্র খেলার মাঠ ভাড়া দেয়া। রেজুলেশন করেও তিনি এই মাঠ ভাড়া দিতে পারেন না, কারণ এই মাঠের ভেতর অনেকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও আছে। সুতরাং মাঠ ভাড়া দিয়ে তিনি ভুমি দস্যুতার পরিচয় দিয়েছেন।
১৪. তিনি নিজে কোনোদিন কোনো খেলাধূলা করেননি এবং জীবনে একবার ফুটবল খেলার গোলকিপার হয়েছিলেন বই হাতে নিয়ে। বল গোলের দিকে আসলে বই রেখে বলে লাথি দেয়ার চেষ্টা করতেন আবার বল চলে গেলে বই নিয়ে পড়তেন। ক্লাসে এই রকম আজগুবি গল্প বলে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছেন এবং খেলাধুলার ব্যাপারে ছাত্র ছাত্রীদের চরম অসহযোগী মনোভাব পোষণ করেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি মাঠ ভাড়া দিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের খেলাধুলার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে এসব গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী ও সচেতন অভিভাবকবৃন্দ মাজেদ সাহেবের অপসারণের দাবীতে আগামীকাল- ৩রা সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার স্কুলের সম্মুখ গেইটে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন।
লেখা: ওমর ফারুক, সাবেক শিক্ষার্থী, বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুল।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।