প্রথম পর্ব থেকে কিছু অংশঃ এজন্য কমপক্ষে তিন ধরনের নিজস্ব প্রতিলিপি তৈরি করার ক্ষমতা সম্পন্ন রোবট তৈরি করা প্রয়োজন হবে। ১. মাইনিং রোবট: এগুলি মৌলিক কাঁচামাল সংগ্রহ করবে, ২. নির্মাণ রোবট: এগুলি কাঁচামাল দ্রবীভূত করবে এবং উপকরণগুলিকে পরিমার্জিত করবে, নতুন অংশগুলি একত্র করবে এবং মেরামত করবে। রোবটগুলি মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজেদের এবং তাদের সহকর্মীদের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। প্রতিবেদনে রোবটগুলি কীভাবে স্বায়ত্তশাসিতভাবে কাজ করতে পারে তার একটি নমুনাও উপস্থাপন করা হয়েছে। এগুলো হবে আঁকড়ে ধরার হুক বা বুলডোজার ও বেলচা দিয়ে সজ্জিত বুদ্ধিমান গাড়ির মতো, রোবটগুলি যদি একাধিক রেলপথ ধরে ভ্রমণ করতে পারে, গ্রহ থেকে খনিজ দ্রব্য আহরণ ও পরিবহন করতে পারে এবং তাদের পছন্দমত সাইজে রূপ দিতে পারে।
দ্বিতীয় পর্ব:
এই গবেষণা প্রজেক্টটির একটি দুর্দান্ত সুবিধা ছিল, এটি এমন এক সময়ে করা হয়েছিল যখন মহাকাশচারীরা কয়েকশ পাউন্ড ওজনের শিলাখন্ড চাঁদ থেকে পৃথিবীতে এনেছিল। এবং জানা গিয়েছিল যে এতে ধাতব, সিলিকন এবং অক্সিজেন উপাদান আছে অনেকটা পৃথিবীর শিলার গঠনের মতই । চাঁদের ভূত্বকের বেশিরভাগ অংশই রেগোলিথ দিয়ে তৈরি, যা সেখানের বেডরক, প্রাচীন লাভা প্রবাহ এবং উল্কার প্রভাব থেকে অবশিষ্ট ধ্বংসাবশেষের সংমিশ্রণ। এই তথ্যের সাহায্যে, NASA বিজ্ঞানীরা এখন চাঁদে কারখানার জন্য আরও ক্লিয়ারভাবে, বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা তৈরি করতে শুরু করতে পারে যা চাঁদের উপকরণ থেকেই নিজস্ব প্রতলিপি তৈরিতে সক্ষম রোবট তৈরি করার চিন্তা করছে। ডিসকভারি চ্যানেল তাদের ডকুমেন্টারির একটি পর্বের জন্য একবার তাত্ত্বিক পদার্থবিদ মিশিও কাকুকে ডেকেছিলেন। তিনি একটি স্ক্যানারে নিজের মুখ রেখেছিলেন। লেজার রশ্মি দ্রুত তার মুখ স্ক্যান করে এবং একটি ল্যাপটপে তার ফলাফল রেকর্ড করে। এই তথ্যটি একটি থ্রি ডি প্রিন্টারে দেয়া হয়েছিল, যা একটি ক্ষুদ্র স্পউট থেকে তরল প্লাস্টিককে সতর্কতার সাথে কালি হিসেবে ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যে,তার নিজের মুখের একটি প্লাস্টিকের মুখোশ তৈরি করে ফেলে। পরে, প্রিন্টারটি তার পুরো শরীর স্ক্যান করে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে, একটি প্লাস্টিকের অ্যাকশন ফিগার তৈরি করে যা দেখতে ঠিক বিজ্ঞানী মিশিও কাকুর মতই।
তাই ভবিষ্যতে, এভাবে আমরা আমাদের অ্যাকশন ফিগারের সংগ্রহের মাধ্যমে নিজেরা সুপারম্যান হিসেবেও আবির্ভূত হতে পারি। ভবিষ্যতের থ্রি-ডি প্রিন্টারগুলি আমাদের সূক্ষ্ম টিস্যুগুলিকে পুনরায় তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে, যা একটি নিজস্ব-প্রতিলিপি তৈরি করা ক্ষমতা সম্পন্ন রোবট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলি বা মেশিনের অংশগুলি তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে। এধরনের প্রিন্টারগুলি রোবট কারখানার সাথেও সংযুক্ত থাকতে পারে, যাতে গলিত ধাতুগুলি সরাসরি একে একে মিলিত হয়ে আরও রোবটে তৈরি করতে পারে। মঙ্গলে প্রথম নিজস্ব-প্রতিলিপি তৈরি করার সক্ষমতা সম্পন্ন রোবটটি তৈরি করা যদিও সবচেয়ে কঠিন হবে। পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য উৎপাদনের একটা বিশাল চালান মঙ্গল গ্রহে পাঠাতে হবে। কিন্তু একবার প্রথম রোবটটি তৈরি হয়ে গেলে, তার নিজের একটি অনুলিপি তৈরি করতে তাকে একা ছেড়ে দেওয়া যাবে। তারপর দুটি রোবট নিজেদের কপি তৈরি করবে, ফলে চারটি রোবট হবে। রোবটের এই সূচকীয় বৃদ্ধির সাথে, আমরা শীঘ্রই মঙ্গল মরুভূমির ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করার কাজ করার জন্য যথেষ্ট বড় একটি নৌবহর পেতে পারি। তারা মাটি খনন করবে, নতুন কারখানা তৈরি করবে। সস্তায় এবং দক্ষতার সাথে নিজেদের সীমাহীন কপি তৈরি করবে। তারা সেখানে একটি বিশাল কৃষি খামার তৈরি করতে পারে। এভাবে শিল্প এবং আধুনিক সভ্যতার উত্থানকে কেবল মঙ্গল গ্রহে নয়, মহাকাশ জুড়ে, গ্রহাণু বেল্টে খনন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, চাঁদে লেজার ব্যাটারি নির্মাণ, কক্ষপথে বিশাল স্টারশিপ একত্রিত করা এবং দূরবর্তী এক্সোপ্ল্যানেটগুলিতে উপনিবেশিক ভিত্তি স্থাপন করার কাজও করতে পারে।
সফলভাবে ডিজাইন করে এবং নিজস্ব-প্রতিলিপি তৈরিতে সক্ষম মেশিন বা রোবট ভিনগ্রহে স্থাপন করা মানবজাতির জন্য একটি অত্যাশ্চর্য কৃতিত্ব বলেই গণ্য হবে। কিন্তু এতসব অবাক করার মত কাজ যেই সব রোবট করবে তাদের তৈরি করতে গেলে আরো অনেক প্রশ্ন সামনে আসবে। যে প্রশ্নগুলো গবেষকদের মাথায় রাখতে হবে। এই রোবটগুলি কেবল নিজের প্রতিলিপি তৈরি করার চেয়ে আরও অনেক কিছু করতে সক্ষম হবে কিনা? তারা বুঝতে সক্ষম হবে কিনা যে তারা কারা? তারা পরিবর্তিত হয়ে নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে পারে কিনা? অন্যান্য রোবট তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব নিতে পারবে কিনা, কমান্ড দেওয়া, প্রকল্পের পরিকল্পনা করা, অপারেশন সমন্বয় করা এবং সৃজনশীল কাজে সমস্যার সমাধান প্রস্তাব করার প্রস্তাব করতে পারবে কিনা? তারা আমাদের সাথে কথা বলবে এবং যুক্তিসঙ্গত উপদেশ ও পরামর্শ দেবে কিনা? নিজস্ব- প্রতিলিপি তৈরিতে সক্ষম সচেতন রোবটের ধারণা আমাদের জটিল অস্তিত্বের প্রশ্ন উত্থাপন করে এবং স্পষ্টভাবে কিছু লোককে ভয় দেখায়, যারা ভয় পায় যে এই মেশিনগুলি তাদের মানব সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে। যেটার ধারণা আমরা টার্মিনেটর নামক হলিউড মুভিতে স্কাইনেট কম্পিউটারের ক্ষেত্রে দেখতে পাই। যে কম্পিউটার নিজে নিজেই সচেতন হয়ে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। যদি বাস্তবে এমন কখনো হয় তাহলে কী হবে? সচেতনতাবোধ সম্পন্ন কম্পিউটার বা রোবট আসলেই কী তৈরি করা সম্ভব? এসব নিয়ে লিখব আরেকদিন।
(সমাপ্ত)
মূল: "The future of humanity" written by Michio Kaku তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক, নিউইয়র্ক সিটি বিশ্ববিদ্যালয়।
ভাবানুবাদ: মোঃ রবিউল ইসলাম, এমএসসি (কোস্টাল এ্যান্ড মেরিন সায়েন্স)।
প্রথম পর্বের লিংক:
https://dainikalokbortika.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9e%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%8b-%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a7%8e%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a6/