সরকারি চাকরি এখন সোনার হরিণের চাইতেও দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতা বাড়ছে বিসিএস, ব্যাংকজব ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও। আমরা জানি সীমিত এবং নির্দিষ্ট সংখ্যা বাদে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ যুবক সরকারি চাকরির বাজার/ক্ষেত্র থেকে ছিটকে পড়বে বা পড়তেই হবে, বাস্তবতা এটাই। পর্যাপ্ত মেধাবী হওয়া মানে যে, সে সরকারি চাকরি বিশেষতঃ বিসিএস ক্যাডার হবেই এই নিশ্চয়তা বা অতি আত্মবিশ্বাস থাকা উচিত নয়। মেধা, ধৈর্যের পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা ও সৌভাগ্যবান হওয়া চাই। তাই বয়স সীমার শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়াটা ভাল কিন্তু হেরে গেলে হতাশ না হয়ে বেসরকারি বিভিন্ন সম্ভাবনাময় সেক্টরে যাওয়ার খুবই প্রয়োজন। নচেৎ বাকি জীবনে নিজেকে প্রচন্ড স্টাগলের ভেতর রাখতে হবে, পারিবারিক, সামাজিক চাপ আবার নোংরা কর্পোরেট পলিটিক্স সামাল দিতে দিতে জীবন তামা তামা হয়ে যাবে।
ভাল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সুন্দর কর্ম পরিবেশ এবং বেতন প্যাকেজও ভাল পাওয়া যায়। সরকারি চাকরির বয়স শেষের পর অনেকে অথৈ সাগরে পড়ে যান। আবার অনেক ভাল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও বয়সসীমা উল্লেখ করে দেয়, তাই বয়স শেষ হওয়ার অন্তত ৬-৮ মাস আগেই বেসরকারি চাকরির (বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি, ভাল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, এনজিও ইত্যাদি) জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখা দরকার।
বেসরকারি চাকরির জন্য টুকিটাকি প্রস্তুতির জন্য করণীয় নিয়ে আজকের এই লেখা –
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আপনাকে কোনো বই মুখস্ত করার দরকার নেই, রাত দিন এক করে, নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে প্রস্তুতিরও প্রয়োজন নেই তবে যেগুলো করা দরকার সেরকম কয়েকটি দিক নির্দেশনা-
১. লক্ষ্য স্থির করা- যদি সরকারি চাকরির বাজার থেকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছিটকে পড়েন তাহলে বেসরকারি কোন ক্ষেত্রে বা কোন ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি ক্যারিয়ার গড়তে চান সেটার ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন। আপনি সেলস, মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং, এফএমসিজিতে যাবেন নাকি এনজিওর রিসার্চ অর্গানাইজেশনে, নাকি স্বেচ্ছাসেবী, ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করবেন সেই লক্ষ্য স্থির করুন।
লক্ষ্য স্থির করার জন্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন –
ক. যে ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান তা আপনার একাডেমিক ক্যারিয়ারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।
খ. একাডেমিক ক্যারিয়ারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে আপনি সেই বিষয়ে কাজ করতে ইতিবাচক চিন্তা পোষণ করেন কিনা। ধরুন, আপনি ফিশারিজে চান্স পেয়ে ভার্সিটিতে জোর করে পড়েছেন এখন আপনার ফিশারিজ রিলেটেড রিসার্চ ফার্ম বা প্রজেক্টে কাজ করতে অনীহা আছে বা মন দিয়ে কাজ করতে ভাল লাগে না, এক্ষেত্রে জোরপূর্বক এই সেক্টরে নিজেকে এনগেইজ করার চেষ্টা করে জীবনের বাকি ৩০ বছর নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে চাকরি করার চেষ্টা করবেন না। একাডেমিক ক্যারিয়ার যাই হোক আপনি যেখানে আগ্রহবোধ করেন সে দিকে ফোকাস দিন। তবে টেকনিক্যাল সাবজেক্ট রিলেটেড সেক্টরগুলোতে একাডেমিক ক্যারিয়ারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে ভাল হয়। না হলেও কিছু ব্যতিক্রম বাদে সেক্টরের বাইরেও ক্যারিয়ার গড়া যায় এবং তা খারাপও হয় না।
২. সুন্দর সিভি তৈরি করা – লক্ষ্য স্থির শেষে সেই লক্ষ্য অনুসারে আপনার সিভি তৈরি করুন। প্রয়োজনে এক্সপার্টদের সহযোগিতা নিন। কিন্তু আরেকজনের সিভি চেয়ে নিয়ে নিজে নিজে কপি পেস্ট মার্কা সিভি তৈরি করবেন না। নিজের সিভি নিজেই বানাবেন, যে রিলেটেড জব করতে চান সেই প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখুন। না পারলে এক্সপার্টদের দিয়ে করিয়ে নিন, তবে অবশ্যই কপি পেস্ট সিভি না।
সিভি তৈরির সময় নিচের বিষয়গুলোতে ফোকাস দিন-
ক. যেহেতু আপনি ফ্রেশার তাই আপনার একাডেমিক ক্যারিয়ারের সাথে সিভিতে যেখানে চাকরি করবেন তার একটা যোগসূত্র তৈরি করুন।
খ. ভার্সিটিতে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজে আপনার এ্যাচিভমেন্ট কী তা উল্লেখ করতে কার্পণ্য করবেন না।
গ. টীম ওয়ার্ক ও লিডারশীপ স্কিল কেমন তা উল্লেখ করুন।
ঘ. রিসার্চ অর্গানাইজেশন ও ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে চাকরি করতে চাইলে ভার্সিটিতে আপনার পেপার পাবলিকেশন আছে কিনা, কোনো প্রজেক্টে কাজ করেছেন কিনা, স্কলারশিপ পেয়েছিলেন কিনা বিস্তারিত উল্লেখ করুন।
ঙ. সিভিতে যোগ্য রেফারেন্স যুক্ত করুন, যিনি আপনাকে ভাল চেনেন, ওই সেক্টরে গ্রহণযোগ্যতা ও সুনাম আছে, আপনার ব্যাপারে এইচআর বিভাগকে পজিটিভ ভাইভ দিবে তার রেফারেন্স দিন। দুইজন রেফারির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ভার্সিটির একজন শিক্ষকের নাম রেফারেন্স হিসেবে দিতে পারেন।
৩. নেটওয়ার্কিং – লক্ষ্য স্থির ও সিভি তৈরির পর এই সেক্টরে আপনার কোনো পরিচিত সিনিয়র থাকলে তাদের সাথে যোগাযোগ বাড়ান, তারা কেমন লোক চায়, যোগ্যতা কী কী চায় তা জানার চেষ্টা করুন। বেসরকারি চাকরির নিজের যোগ্যতার পাশাপাশি কমিউনিকেশন স্কিল গুরুত্বপূর্ণ।
৪. বিডিজবস, লিঙ্কডইন প্রোফাইল শতভাগ আপডেট রাখুন এবং আপনার আগ্রহের ক্ষেত্রগুলোতে চাকরির সার্কুলারের দিকে নজর রাখুন। ওই সেক্টরগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে লিঙ্কডইনে কানেক্ট হওয়ার চেষ্টা করুন। কমিউনিকেশন স্কিল কাজে লাগিয়ে সংক্ষেপে আপনার পরিচয় ও এ্যাচিভমেন্ট জানিয়ে তাদের টাচে থাকার চেষ্টা করুন। তবে হুট করে, নক করেই অপরিচিত কারো কাছে চাকরি চেয়ে বসবেন না। আপনাকে চাকরি দেয়ার জন্য তারা বসে থাকে না। প্রতিষ্ঠানে লোক নিচ্ছে কিনা, শীঘ্র নেবে কিনা এসব আভাস জানতে পারলে ধীরে সুস্থে মেসেজের রিপ্লাই পাওয়া সাপেক্ষে আপনার যোগ্যতার কথা বলে আপনার যোগ্যতাকে হায়ার করার অফার দিন। ভাই যেকোন একটা জব লাগবে, আমি খুব বাজে অবস্থায় আছি এই ধরনের কথা বলে চাকুরিতে ঢোকার অফার পাওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। ইমিডিয়েট কাছের সিনিয়র হলে সেটা আলাদা হিসাব, তবুও কর্পোরেট লেভেলে এ জাতীয় ইমোশনাল কথা বা নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে চাকরি না চাওয়া ভাল; চাইলে স্যালারি নেগোসিয়েশনে আপনি কিন্তু হেরে যাবেন। আপনার যোগ্যতাকে কমমূল্যে হায়ার করার সুযোগ পাবে। মনে রাখবেন আপনাকে কমমূল্যে হায়ার করতে পারাটাই কিন্তু আপনার নিয়োগকর্তার পারফর্মেন্স হিসেবেই বিবেচিত হবে।
৫. সেক্টরের সাথে সংগতিপূর্ণ দু’একটা প্রফেশনাল ট্রেনিং করে রাখলে অনেকসময় সুবিধা পাওয়া যায়।
৬. ফ্রেশার লেভেলে চাকরির মৌখিক পরীক্ষাগুলোতে খুব কমন কিছু প্রশ্ন থাকে, ইউটিউবে ৫-৭ টা ভিডিও সার্চ দিয়ে সেসব প্রশ্ন ও উত্তরগুলো দেখুন, উত্তরগুলো নিজের মত করে প্রস্তুত রাখুন।
৭. বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের ক্যারিয়ার হান্ট/ট্যালেন্ট হান্ট টাইপের প্রোগ্রামে যোগ দিন, সিভি ড্রপ করতে থাকুন। ইনশাল্লাহ মানসম্মত বেসরকারি চাকুরিতে ঢুকতে পারবেন। মনে রাখবেন, বেসরকারি চাকুরিতে এন্ট্রি লেভেলটা গুরুত্বপূর্ণ। ভাল প্রতিষ্ঠানে ভালভাবে এন্ট্রি নিতে পারলে ক্যারিয়ারটা দ্রুত উপরমুখী হয়। নচেৎ অনেক কাঠ খড় পোহাতে হয়। সুতরাং হতাশ না হয়ে ফোকাসড হোন।
মোঃ রবিউল ইসলাম
এক্সিকিউটিভ
এমজেএল বাংলাদেশ পিএলসি
রিজিওনাল অফিস
৫৬/৩, মীরেরচক, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।
মোঃ রবিউল ইসলাম এর ফেসবুক ওয়াল থেকে।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।
পোষ্টি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। নিজ চাহিদার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিধায় আরো বেশি মনোযোগী ছাত্রের মতো একটানা পড়ে নিলাম।
ধন্যবাদ জানায় সংশ্লিষ্ট সকলকে।