ভারতের বেঙ্গালুর শহরটি এমনিতেই স্বাস্থ্য শহর হিসেবে পরিচিত। এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রসিদ্ধ সব হাসপাতাল এবং আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় সজ্জিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিনন্দন নানান অবকাঠামো। ঢাকাকে আমরা মসজিদের শহর বললে বেঙ্গালুরকে অনায়াসে মন্দিরের শহর বলা যায় এবং অধিকাংশ মন্দিরগুলোর চোখ ধাঁধানো কারুকাজ দেখে থমকে দাড়াতেই হয়। এখানকার মানুষগুলোও খুবই পরিশ্রমী, সৎ এবং অত্যন্ত সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতা সম্পন্ন। কলকাতা বা ঢাকার মতো ঘিঞ্জি এলাকা নেই, পরিকল্পিতভাবে নির্মিত নির্দিষ্ট বাস বে তে অত্যাধুনিক সিটি সার্ভিস যাত্রীবাসগুলো এসে দাড়ায়। ভারতের আইটি সেক্টরের অন্যতম নেতৃস্থানীয় সিটি হয়েও ছিমছাম কিন্তু গতিশীল থাকে, অনেকটা ব্যাংককের মতোই মনে হয় পরিকল্পিত বেঙ্গালুর শহরটিকে। এখানকার আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো ইটকাঠ পাথর আর যান্ত্রিক জগতের সাথে আনুপাতিক হারে গড়ে তোলা হর্টিকালচার পার্ক আর পর্যাপ্ত বৃক্ষের ছায়াঘেরা রাস্তাগুলোকে পরিবেশবান্ধব করে সাজানো। এই শহরে আসলে আপনি নিশ্চিত পছন্দ করবেন, অযাচিত হর্ণ বাজানোর শব্দ দূষণ মুক্ত শহরে অনেকটা পথ হাঁটতে চাইবেন নির্দিধায়।
দ্য হিন্দু নিউজ পেপারে কিছুদিন আগে বেঙ্গালুরের একটি ছবি এবং খবর বের হয়েছে। ছবিটি বেঙ্গালুরের কার্বন পার্কের। এখানে এক নতুন প্রথা শুরু হয়েছে। চুপচাপ বই পড়ে যাওয়া পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত। অর্থাৎ পড়ার মতো কিছু, যেমন বই, নিউজপেপার এমনকি রিসার্চ পেপার পর্যন্ত এখানে নিয়ে চলে আসা যায়, পছন্দমতো জায়গা বেছে নিয়ে চাদর পেতে বসে বা গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়া শুরু করা যায়। কাগজের বইই হতে হবে এমনটা নয়। কিন্ডেল, ট্যাব, ল্যাপটপও পড়ার মাধ্যম হতে পারে। তবে যাইহোক কোন শব্দ করা কিন্তু চলবে না। অর্থাৎ ফোন ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে। পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে সৌজন্যমূলক কথাও বলা যাবে না। পড়ার সময় পাঁচ ঘন্টা, মাঝে একটা বিরতি আছে সেই সময়ে কথা বলতে পারেন, খাওয়া দাওয়া সেরে নিতে পারেন; তারপর আবার পড়া। চুপচাপ বই পড়ার এই প্রথা নাকি আরোও কিছু শহরে শুরু হয়েছে বেঙ্গালুরের দেখাদেখি। যেখানে আমাদের সন্তানেরা মোবাইল আসক্ত হয়ে দিনে দিনে ঘরকুনো আর অসামজিক হতে শুরু করেছে সেদিক থেকে এই উদ্ভাবনী উদ্যোগটি অন্যতম সেরা বিকল্প হাতিয়ার হতে পারে মননশীল আধুনিক সমাজ গড়ার পথে।
আমাদের ঢাকা শহরে আছে বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চন্দ্রিমা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এসব বৃক্ষশোভিত উদ্যানে অনায়াসেই কিছু স্থান পাঠক কর্ণার হিসেবে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিতে পারলে পার্কের ভিতর নানান অসামাজিক কর্মকাণ্ডের পরিবর্তে সুকুমার চর্চার প্রতি যুব সমাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। যেকোন ভালো উদ্যোগ নকল করলে তার সুফল পাওয়া যায়, টিকটকারদের সস্তা নকলবাজির চেয়ে এই উদ্যানগুলোতে বৃক্ষছায়ায় শুয়ে বসে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে তা হবে অনেক বেশী সৃষ্টশীল ও জনহিতকর উদ্যোগ। সারাদেশেই অসংখ্য পার্ক বা বোটানিক্যাল গার্ডেনে এই নকলবাজিটা করার সুযোগ কিন্তু আছে। তবে সর্বপ্রথম আমাদের ঢাকার দুই সিটির মেয়র ও নগর পরিকল্পনাবিদদের কাছে চমৎকার এই আইডিয়াটা পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানাই দৈনিক আলোকবর্তিকার নিয়মিত পাঠকদের।
সূত্রঃ ফেসবুক বন্ধু @Anmon Rahman
সংকলনঃ পল্লব খন্দকার, ১১ জুলাই ২০২৩।
mazhabkh93@gmail.com
পড়লাম, মনে হচ্ছিলো কাছে পিঠে এরকম একটা জোয়গা পেলে শরীরটা খানিক এলিয়ে দিয়ে পড়ার মজাটা উপভোগ করি। তাই মনে প্রাণে চাই এরকম সৃষ্টিশীল উদ্যোগ যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়িত হোক।