পাশের বাসার ভাবি ও আমার বউ পরস্পর আমার বাসার বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছে। ছুটির দিনে আমি বেডরুমে শুয়ে কান খাড়া করে ওদের গল্পে আড়ি পাতার চেষ্টা করছি। জানালার থাই গ্লাসটা ওদের অগোচরে একটুখানি খুলে দিলাম যাতে কথোপকথনে সহজে আড়িপাতা যায়। পাশের বাসার আরেক ভাবীর মেয়ের বিয়েতে কে কী পরবে তা নিয়ে কথা হচ্ছে। পাশের বাসার ভাবী গল্পের এক পর্যায়ে বলল, জানেন ভাবী? আমার ১৫০-২০০ পিচ শাড়ি, জামা কাপড়ের কোনো অভাবই নেই।
এইবার আমি প্রমাদ গুণলাম! বউ এর শাড়ি বড়জোর ৭-৮ টা হবে। যদিও বউ নিয়মিত শাড়ি পরে না। তবুও পাশের বাসার ভাবীর ২০০ পিচ শাড়ি আছে এই তথ্যের একটা ঢেউ আমার ওপর আছড়ে পড়ার সম্ভাবনাকে মোটেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। গল্পের অবশিষ্টাংশে কী আছে শোনার জন্য কান আরো কিঞ্চিৎ খাড়া করলাম। বালিশ থেকে মাথা দুই সুতা পরিমাণ ওপরে তুলে দুইটা কানই বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে দিলাম, শব্দমালাকে আরো সহজে সংগ্রহ করে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে দেয়ার নিমিত্তে। কারণ গল্পের এই অংশে নিশ্চয়ই আমার বউয়ের অনুভূতি প্রকাশ অপেক্ষা করছে। সুতরাং কান খাড়া রাখাটা বেশি জরুরী।
বউ বলল, ও আল্লাহ্! ভাবী, বলেন কী? এতগুলো শাড়ি!! আপনি আসলেই সৌভাগ্যবতী। তা ভাবী একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
পাশের বাসার ভাবী বলল, কি ভাবী? কি জিজ্ঞেস করবেন বলেন?
বউ বলল, আপনি বিয়ে করছেন কত বছর হল?
পাশের বাসার ভাবী বলল, আড়াই বছর হল ভাবী।
বউ বলল, বিয়ের সময় বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি মিলে কয়টা শাড়ি পেয়েছিলেন?
ভাবী বলল, প্রায় ২৫-৩০ টার মত।
আমার কান সহসা আরো খাড়া হয়ে উঠল। কারণ এবার আমার বউ এর প্রতি উত্তরের পালা।
বউ বলল, ভাবী, ২০০ থেকে ৩০ বাদ দিলে হয় ১৭০ টা। এই ১৭০ পিচ শাড়ি আপনি আড়াই বছর মানে ৩০ মাসে কিনলেন কিভাবে?
সপ্তাহে একটা করে কিনলে দুই বছরে ৫২*২=১০৪ টা আর ছয় মাসে হয় ২৬ টা। অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে একটা করে শাড়ি কিনলে মোট শাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩০+৩০=১৬০ টা। কিন্তু আপনি এই বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়েছেন তিনমাস হল। গত তিনমাসে একটা শাড়িও কিনতে দেখলাম না। তাহলে ওখানে আবার ১৫ টা কম। মানে ১৪৫ টা শাড়ি থাকবে, যদি প্রতি সপ্তাহে একটা করেও কিনে থাকেন।
ভাবীর উত্তরের অপেক্ষা না করে আমি বালিশে মাথা রেখে বউ এর ওপর সাংঘাতিক রকমের প্রসন্ন হয়ে জানালার থাই গ্লাসটা টেনে দিয়ে শান্তিমত ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
সংগ্রহ: মোঃ রবিউল ইসলাম এর ফেসবুক থেকে।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।