আপনি সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আপনার মনে যদি শুধুমাত্র একটা প্রশ্নই উদিত হয় যে, এতো সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে নিখুঁতভাবে একদম মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত কিভাবে মানুষের সমগ্র দেহটি পরিচালিত হয়! তাহলেই এই মানব শরীরের রহস্য ও বিজ্ঞানের ব্যাপারটি নিয়ে আপনি ভাবতে বাধ্য হবেন। মাইক্রোস্কপিক শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনে সৃষ্ট ভ্রূণ বৃদ্ধি পেতে পেতে মানবরূপ ধারণ করে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন শারীরিক আকৃতি ও প্রকৃতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে শেষ পরিণতি মৃত্যুর মাধ্যমে পার্থিব জীবনের অবসান ঘটে? আমরা ভাবি এই যে জন্ম, শরীরের বৃদ্ধি, বুদ্ধির বিকাশ এবং একসময় বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ পুরোটাই প্রাকৃতিক একটি সূত্রের বা চক্রেরই মতো। এই যেমন প্রাকৃতিক নিয়মে দিন শেষে রাত আসে আবার রাত শেষ হলে দিনের আলো দেখা যায়? যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী তাঁরা পুরোপুরিই কর্তার মর্জির উপর ছেঁড়ে দেন আর অবিশ্বাসীরা প্রকৃতির উপর দায় দিয়ে জগত সংসারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যে মনোনিবেশ করেন।
আমার মধ্যে অবশ্য সেই শৈশবকাল থেকেই এই দেহ ঘড়ির রহস্য নিয়ে ভাবনার জগতে মাঝে মাঝে ডুব দেয়ার কিঞ্চিৎ পাগলামি আছে। যদিও ডুব দিয়ে কূলকিনারা কখনোই খুঁজে পাইনি তবে সেই ভাবনাগুলোর মাঝে ডুবে গিয়ে একধরনের আনন্দ পেয়েছি। এই যেমন খুব সাধারণ ব্যাপার, আমাদের সকলের দেহের কাঠামোটি অর্থাৎ মেরুদণ্ড সহ মাথার খুলি, হাত-পা, পাজরের হাড়্গুলোর চেহারা কিন্তু এক। প্রাণী জগতে একমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই বাহ্যিক অবয়বে ভিন্ন ভিন্ন চেহারার দেখা মেলে, শুধুমাত্র যমজরা ব্যতীত এই লক্ষ কোটি মানুষের ভিন্ন ভিন্ন চেহারার রহস্য কি? অন্যদিকে আর সকল প্রাণীদের বাহ্যিক চেহারায় হুবহু মিল, একই প্রজাতির একটি প্রাণীরও চেহারায় ভিন্নতা নেই, আকৃতিগত পার্থক্য ছাড়া তাদের মধ্যে আর কোন পার্থক্য কেনো পরিলক্ষিত হয় না?
বিজ্ঞানীরা বহু সাধনা করছেন মানব দেহের সম্পূর্ণ রহস্য উদঘাটনে, অনেক অনেক সাফল্য যেমন আছে ঠিক তেমন এখনো অনেক বিষয় অমীমাংসিত রয়েই গেছে। আমি মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গের বিশ্লেষণ ও কর্মকান্ড পরিচালনার বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করবো ও আপনাদের সাথে রহস্যগুলো ভাগাভাগি করে নেবো। এই প্রথম পর্বে মানুষের মাথার উপরে থাকা চুল নিয়ে দেখি কি কি জানা সম্ভব, আসলে চুল না থাকলেই বা কি সমস্যা ছিলো? দেখা যাক উইকিপিডিয়া ও অনলাইনে কি কি জ্ঞান অপেক্ষা করছে চুল নিয়েঃ
চুল অন্তস্ত্বক বা ত্বকের বহিঃস্তরে অবস্থিত ফলিকল থেকে উৎপন্ন চিকন লম্বা সুতার মতোন প্রোটিন তন্তু। শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে পাওয়া যায় বলে চুল স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি নির্দেশক বৈশিষ্ট্য। চুলের প্রধান উপাদান হচ্ছে কেরাটিন। কথা হলো ফলিকল কি তবে? ফলিকল হচ্ছে এক ধরনের কোষ যা থেকে চুল জন্মায়। এটি চুলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রত্যেকটি চুলের তন্তু তৈরি হয় কেরাটিন নামের একটি প্রোটিন দিয়ে। এর তিনটি অংশ হল মেডুলা, কর্টেক্স এবং কিউটিকল। সবচাইতে ভেতরে থাকে মেডুলা। এই স্তরটি অবশ্য সবসময় উপস্থিত থাকে না। বেশিরভাগ সময়ে উপস্থিত থাকে এর পরের স্তর-কর্টেক্স। চুলকে দৃঢ়তা প্রদান এবং পানি সরবরাহের কাজটি এই স্তরের মাধ্যমে ঘটে। কর্টেক্সে থাকে মেলানিন, এর উপস্থিতি এবং পরিমাণের কারনেই আমাদের চুলের রঙ বিভিন্ন রকমের হয়। চুলের গোড়া বা ফলিকলের ওপর নির্ভর করে কর্টেক্সের আকৃতি, আবার কর্টেক্স এর উপাদান তন্তুর আকৃতির ওপর নির্ভর করে আমাদের চুল কতটা সোজা বা কোঁকড়া হবে। গোলাকার নিয়মিত আকারের তন্তু থেকে আসে সোজা চুল। বা অনিয়মিত আকারের তন্তু থেকে উৎপত্তি হয় ঢেউ খেলানো এবং কোঁকড়া চুলের। আর এই দুটি স্তরের ওপরে থাকে কিউটিকল। এর গঠন বেশ জটিল আর এর কারণে চুলের ওপর থেকে পানি গড়িয়ে যায়। মানুষের চুলের ব্যাস হয় সাধারণত ১৭ থেকে ১৮০ মাইক্রোমিটার। চুলের গোড়ায় থাকা গ্রন্থিগুলো চর্বিযুক্ত এক ধরণের পদার্থ নিঃসরণ করে যার ফলে চুল থাকে মসৃণ এবং প্রানবন্ত। চুল এবং নখ যে আসলে মৃত কোষ দিয়ে তৈরি তা তো আমরা জানি। চুলের একমাত্র জীবিত অংশ থাকে চুলের গোড়া বা ফলিকল এর ভেতরে। ফলিকলের ভেতরে আরও থাকে বিভিন্ন গ্রন্থি এবং Arrector Pili নামের পেশী, যেগুলোর কারণে ঠাণ্ডা লাগলে বা ভয় পেলে আমাদের চুল খাড়া হয়ে যায়।
চুলের রঙ আসে দুই ধরণের রঞ্জক পদার্থ থেকে। এর দুটোই হল মেলানিন জাতীয়, তৈরি হয় ফলিকলের ভেতরে এবং পরে চুলের তন্তুর ভেতরে চলে আসে। এর একটি হল ইউমেলানিন যা দেখা যায় বাদামি চুল, গাড় সোনালি চুল এবং কালো চুলে। আবার ফিওমেলানিন বেশি দেখা যায় লাল চুলে। সোনালি বা ব্লন্ড চুল দেখা যায় চুলের তন্তুতে অনেক কম রঞ্জকের উপস্থিতির কারণে। যখন শরীরে এই মেলানিন তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় বা কমে আসে তখনি দেখা যায় সাদা বা ধূসর চুল। অনেকের মাথায় জন্ম থেকেই দেখা যায় ছোপ ছোপ সাদা চুলের উপস্থিতি। এসব স্থানে কখনোই মেলানিন উৎপন্ন হয় না। চুলের বৃদ্ধির রয়েছে তিনটি দশা, অ্যানাজেন, ক্যাটাজেন এবং টেলোজেন। চুলের কাজ কি আমাদের শরীরে? এর কাজগুলোর মাঝে রয়েছে উষ্ণতা প্রদান, নিরাপত্তা, স্পর্শের অনুভুতিকে বাড়িয়ে দেওয়া, চোখের নিরাপত্তায় চোখের পাতা এবং ভুরু ইত্যাদি।
(চলবে................................................)
দৈনিক আলোকবর্তিকা ডেস্ক।