মস্তিষ্ক নিয়ে এর আগে চারটি পর্ব লিখেছি বা আলোচনা করেছি বললেই ভালো হয়। মস্তিষ্ক নিয়ে লেখার আমি কেউই না, আমি শুধু একজন অনুসিধ্যাৎসু মানুষ, দেহের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে আমার মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল শুধুমাত্র সেই জিজ্ঞাসার জায়গা থেকে অনলাইন ঘেঁটে যতটা পারা যায় ততটা হজম করার চেষ্টা করছি। মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ ব্যাপার স্যাপার বুঝতে আমাকে নিশ্চিত একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করতে হবে যার যোগ্য আমি নই। তবে আমার দুজন ডাক্তার ও প্রফেসর বন্ধু আছেন যাদের একজন নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও অন্যজন নিউরোসার্জন। নিউরোসার্জন বন্ধুটি প্রায়ই দেশি বিদেশি মেডিকেল জার্নালে জটিল সব সার্জারি নিয়ে গবেষণা পেপার প্রকাশ করে থাকে। সেইসব পেপারের বিষয়বস্তু এতোটাই গভীর যে আমার পক্ষে দুই এক লাইন পড়ার মতো সাহস করতে পারি না। তাই শুধুমাত্র মস্তিষ্কের গঠন ও মূল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গঠন, অবস্থান ও কার্যক্রম নিয়ে চর্চা চালাতে চেষ্টা করছি।
আজকের পর্বটিতে মস্তিষ্কের সর্বশেষ অংশ পশ্চাত মস্তিষ্ক নিয়ে কিছু জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি। আমরা জানি প্রাপ্তবয়স্ক লোকের মস্তিষ্কের আয়তন ১৫০০ ঘন সেন্টিমিটার, গড় ওজন ১.৩৬ কেজি এবং এতে প্রায় ১০ বিলিয়ন নিউরন থাকে। পশ্চাত মস্তিষ্ক মূলতঃ সেরিবেলাম, পনস এবং মেডুলা অবলাংগাটা নিয়ে গঠিত। সেরিব্লাম পেশির টান নিয়ন্ত্রন, সমন্বয় সাধন এবং দৌড়ানো ও লাফানোর কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মেডুলা অবলাংগাটা খাদ্য গলাধঃকরণ, হ্রদপিন্ড ও ফুসফুসের জটিল কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
১। সেরেবেলাম (cerebellum)
২। পনস (pons)
৩। মেডুলা অবলাংগাটা (medulla obolongata)
সেরেবেলাম (cerebellum) : এটি পশ্চাৎমস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ যা সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের নিচে অংশ দুটি সমগোলার্ধে গঠিত। গোলার্ধ দু’টি ভার্মিস (vermis) নামে একটি ক্ষুদ্র যোজকের সাহায্যে যা বাইরের অংশ গ্রে ম্যাটার-এ এবং ভিতরের অংশ হোয়াইট ম্যাটারে-এ গঠিত। পূর্ণ বয়স্ক মানুষে সেরেবেলাম প্রায় ১৫০ গ্রাম।
কাজ :
খ. পনস (pons) : এটি মেডুলা অবলংগাটার উপরের অংশের মেঝেতে অবস্থিত এবং আড়াআড়ি স্নায়ুতন্তু নির্মিত।
কাজ :
গ. মেডুলা অবলাংগাটা (Medulla obolongata) : এটি পনস-এর নিচের কিনারা ঘেঁষে প্রসারিত, অনেকটা পিরামিড আকৃতির দন্ডাকার অংশ যা লম্বায় প্রায় ৩ সেমি চওড়ায় ২ সেমি. এবং স্থুলত্বে ১.২ সেমি.।
কাজ :
মধ্যমস্তিষ্ক, পনস ও মেডুলা অবলংগাটাকে একত্রে ব্রেইন স্টেম (brain stem) বলে।
সর্বশেষ মানবদেহের মস্তিষ্ক পর্বে আমার নিজস্ব জ্ঞানের কিছুটা জাহির করতে চেষ্টা করে দেখি! এই মস্তিষ্কের সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কতশত ঘটনা ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে থাকার পরেও সেটা অনুভব করতে পারি না। কারন এটি জন্মসূত্রেই পেয়ে গেছি, মেশিন একবার চালু হয়ে গেছে তো আর বুঝি নেই কোন ভাবনা? বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায় একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণীতে চোখের অনুচ্ছেদ পড়তে গিয়ে যখন জানলাম মানুষের চোখে কোন বস্তুর উল্টো ও বাস্তব প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে মনে ধাক্কা খেলাম, কিভাবে তাহলে আমরা বস্তুকে সোজা দেখি? জানতে পেরেছিলাম এই সোজা করে দেখার কাজটি সম্পন্ন হয় মস্তিষ্কের ভিতরে। চোখের কিছু অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হয়ে পৌঁছানো উল্টো প্রতিবিম্ব মস্তিষ্কের ভিতরে প্রক্রিয়াজাত হয়ে আমাদের কাছে সোজা ও অবাস্তব প্রতিবিম্ব হিসেবে দেখা দেয়! এই অত্যাশ্চর্য্য ব্যাপারটি মূহুর্তের মধ্যে কিভাবে ঘটে থাকে তা নিঃসন্দেহে বিস্ময়ের মাত্রাকে শুধুই বর্ধিত করে চলে! আমরা আসলে যা কিছু দেখি সবই উল্টোটা দেখি, এইরকম চরম সত্য বা বিজ্ঞানের রহস্য আমাদের মানব দেহের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে, যতোই আপনি এটির গভীরে প্রবেশ করবেন ততোই আপনার বিশ্বাস অথবা দ্বিধাদন্দ প্রবল হতে থাকবে।
(চলবে————————)
পল্লব খন্দকার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।
Leave a Reply