আমাদের শরীরে যা কিছু আছে কোনটিকেই আপনি অপ্রয়োজনীয় বলতে পারবেন না। যেটা আছে সেটার ছোট হোক বড় হোক কিছু না কিছু ভূমিকা রাখছে সম্পূর্ণ শরীরটাকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হবার জন্য। ইতিপূর্বে দুইটি পর্বে আমরা ত্বকের তিনটি স্তরের দুইটি এপিডার্মিস (বহিঃত্বক) ও ডার্মিস (মধ্যত্বক) নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ ত্বকের আর একটি স্তর হাইপোডার্মিস (অন্তঃত্বক) নিয়ে চলবে কিছুটা জ্ঞান নেবার চেষ্টা। আসলে আমি নিজেই শরীরের এমন সুবিন্যস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রহস্য নিয়ে জানতে চাই, একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে এখানে লুকিয়ে থাকা রহস্য ও বিজ্ঞানের পাঠ বোঝার আংশিক চেষ্টা করি। আমার সাথে সাথে যদি পাঠকের মনের মধ্যে থাকা মানব শরীরের গঠন নিয়ে কিছুটা কৌতুহল থেকে থাকে আশা করি কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও চিন্তার খোরাকে পানি ঢালতে পারবো।
হাইপোডার্মিস বা অন্তঃত্বক আমাদের ত্বকের সবচেয়ে গভীর অংশ বা সবার নীচে থাকে। এই অংশটি ত্বকনিম্নস্থ চর্বিযুক্ত কোষ দ্বারা গঠিত, এই অংশটি সংযোজক কলা, স্নায়ু ও রক্তনালী দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। এখানেও ঘাম গ্রন্থি ও চুলের ফলিকলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। হাইপোডার্মিসে শক্তি গচ্ছিত থাকে, দেহের পেশী ও হাড়ের সাথে ডার্মিস (মধ্যত্বক) এর সংযোগ রক্ষা করে। হাইপোডার্মিস আমাদের শরীরকে Insulating বা অন্তরণ করার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ঘামের মাধ্যমে ঠান্ডা ও গরমের অনুভূতির ভারসাম্য রক্ষায় ডার্মিসকে সহযোগিতা করে। অর্থাৎ আমাদের ত্বকের পূর্ণতা পাবার জন্য হাইপোডার্মিসের ভূমিকা অপরিসীম, এই অংশটি যথাযথভাবে গঠিত থাকায় আমরা ত্বকের অন্যান্য অংশের কাজে হারমোনি দেখতে পাই। একটি অংশ ছাড়া অন্যটি অচল, এই যে শৃংখলাবদ্ধতা তার মেকানিকের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই হবে।
আপনি নিজের শরীরের এমন প্রতিটি অংশের গঠন ও কাজ নিয়ে হয়তো একটুও চিন্তা করবেন না। কারন এটা যতক্ষন ঠিকঠাক মতো কাজ করবে এই মহান শরীরের ভালো মন্দ নিয়ে আপনি হয়তো কিছুই মনে করবেন না। ভাববেন এমনই তো হবার কথা। কিন্তু যখন সামান্য কোন কারনে, কিছুর অভাবে বা সঠিকভাবে কাজ করতে না পারায়, রোগ বা দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে শরীরের আংশিক কোন পদ্ধতি বিকল হয়ে পড়লেই বুঝতে পারবেন কিভাবে শরীরের প্রতিটি অংশের অপরিহার্যতা। এসব নিয়ে যত গভীরভাবে ভাববেন, যত বেশী শেখার বা জানার চেষ্টা করবেন আপনার মনে প্রশ্ন আসবেই কে এমন নিখুঁত শরীরের গাঁথুনিতে গেঁথে দিয়েছে আমাদের পুরো দেহটাকে? আপনাআপনিতেই সবকিছু হয়ে যাচ্ছে? এর পিছনে কি বিজ্ঞান লুকিয়ে আছে, নাকি আছে কোন রহস্য? শুক্রাণু ডিম্বাণুর মিলনের পর এক কোষী জাইগোট, এরপর ম্যাজিকের মতো মাতৃ জঠরে একটার পর একটা অঙ্গ সৃষ্টি হতে থাকে সামান্য একটা জিনের মডেল অনুসরণ করে! কে সেই ম্যাজিশিয়ান?
(চলবে———————————-)
দৈনিক আলোকবর্তিকা।
mazhabkh93@gmail.com