বাচ্চাদের কোলে নিয়ে কেনো মাথাটা খুব সাবধানে রাখতে হয়, মাথার মাঝখানে কেনো নরম থাকে এসব নিয়ে সাধারণ ধারনা হলো শিশু অবস্থায় তাদের মাথার খুলি পুরোপুরি শক্ত হয় না। এই সাধারণ ধারনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি তা এতোদিন জানা হয়নি আমার, এই বিষয়টি নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে আসল তথ্য বের হয়ে এলো। শিশুদের মাথার খুলির বিভিন্ন হাড়গুলো পারষ্পারিক অংশগুলো জোড়া লাগানোর জন্য সুতার মতো সংযোজক টিস্যু বা কলাকে বলা হয় সুচার (Suture)। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হয়েও এর আগে কোনদিনই এই সুক্ষ বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখিনি, রীতিমত বিস্ময় ছড়িয়ে যায় মানব দেহের ভিতরেই হাজারো সুক্ষ সুক্ষ জ্ঞানের ভান্ডার প্রত্যক্ষ করলে! শিশুকালে এই সুচার (Suture) গুলো কম দৃড় থাকে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তা আরো বেশী দৃড় হতে থাকে। শুধু তাই নয়, একসময় এই সুচার (Suture) খুবই শক্ত হয়ে মাথার খুলির সবগুলো হাড়কে সুদৃড়ভাবে সংযুক্ত করে রাখে।
কথা হলো সুচার (Suture) তো জন্মের সময়েই দৃড় হয়ে সৃষ্টি হতে পারতো, সেটা হলে মানুষের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক বৃদ্ধির জন্য যে ফ্লেক্সিবিলিটি বা নমনীয়তা প্রয়োজন তা সম্ভব হতো না। এখানেই শেষ নয়, নিউরোলজীর ডাক্তারদের মস্তিষ্কের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে যদি অপারেশন করতে হয় এবং পুরো মাথার খুলিটা যদি একক হিসেবে কল্পনা করি তাহলে কি মাথা না ফাটিয়ে আর উপায় ছিলো? এই সুচার (Suture) এর সুক্ষ জোড়াগুলো সাবধানে আলাদা করেই ডাক্তারদের মাথার অপারেশন করতে হয়। হায়রে মানব কারিগর, কি অসীম বুদ্ধিমত্তায় তিনি মানবদেহকে নিখুঁত রূপ দিয়েছেন। যেখানে যেটুকু প্রয়োজন তার এক বিন্দু নড়ন চড়ন করা হয়নি, আপনাকে তাই অবশ্যই মানব হিসেবে জন্ম নেবার জন্য সৃষ্টিকর্তা বা প্রকৃতির কাছে মাথা নত করতেই হবে।
মানুষের খুলিতে মোট ৫টি সুচার (Suture) রয়েছে: ২টি স্কোয়ামাস সুচার, ১টি করোনাল, ১টি ল্যাম্বডয়েড ও ১টি স্যাজাইটাল সুচার। পশ্চাৎ ফ্রন্টানেলি সাধারণত জন্মের আট সপ্তাহের মাথায় বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু সম্মুখ ফ্রন্টানেলি জন্মের আঠারো মাস পর্যন্তও খোলা থাকতে পারে। মানুষের মাথার গড়ন যে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে তার অন্যতম কারন এই সুচার (Suture) এর জোড়া লাগানোর বিভিন্নতা। এমনকি মানুষের অস্বাভাবিক মাথার গড়ন হতে পারে সুচার (Suture) এর কার্যকারিতা ঠিকঠাক মতো নাহলে। নিউরোলজির ডাক্তারদের জন্য তাই মাথার খুলির সুচার (Suture) খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু, এই সুক্ষ খুলি জোড়া লাগানোর সংযোজক টিস্যু বা কলাকে সঠিকভাবে প্রতিস্থাপন করার উপর মাথার অনেক ধরনের সার্জারি বা অপারেশনের সাফল্য ব্যার্থতার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
মোটা দাগে সুচার (Suture) এর কাজগুলো নিম্নরূপ:
পরবর্তী পর্বে আমরা মাথার খুলির মুখমণ্ডলীয় অস্থিকাঠামো (বা মেমব্রেনাস ভিসেরোক্রেনিয়াম) নিয়ে জানার চেষ্টা করবো। এই লেখাগুলোকে যতোটা সম্ভব সহজ করে বোঝার চেষ্টা করছি। গুগল, উইকিপিডিয়া, চ্যাটজিপিটি ইত্যাদির সহযোগিতা নিয়ে লেখার কারনে একজন ডাক্তার বা মেডিকেল শিক্ষার্থীর বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সাথে আমার উপস্থাপিত তথ্যগত অনেকটাই পার্থক্য থাকতে পারে বা ভুলও হতে পারে। সেই রকম পরিস্থিতিতে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান প্রকাশের এই চেষ্টার জন্য সকল পাঠকের কাছে অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
(চলবে———————————-)
দৈনিক আলোকবর্তিকা।
mazhabkh93@gmail.com
Leave a Reply