আমরা কাউকে কম বুদ্ধির বলে অবজ্ঞা করতে চাইলে বলি তার মাথায় ঘিলু কম বা ঘিলু নাই! আবার বিরক্ত হয়েও বলি অমুক আমার মাথা নষ্ট করে দিলো? এখানে অবশ্য মাথা বলতে মস্তিষ্ক বা ঘিলু বা ব্রেইন বোঝানো হয়। আবার কারো যদি আচরণে অস্বাভাবিকতা থাকে আমরা বলি তার মাথা নষ্ট বা মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে আবার কেউবা বলে ব্রেইন আউট হয়ে গেছে। মানব শরীরের এই মহামূল্যবান অঙ্গ ঘিলু বা মস্তিষ্ককে বিশেষভাবে রক্ষার জন্যই সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে বা প্রকৃতিবাদীদের মনোভাব অনুযায়ী প্রকৃতির প্রয়োজনে সর্বোচ্চ সুরক্ষায় রাখা হয়েছে। চুল, ত্বক, মাথার খুলি সবকিছুই কিন্তু মস্তিষ্ক রক্ষাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। অনেকটা একজন রাজা বা বাদশাহকে চারিদিক থেকে নিরাপত্তা প্রহরীরা যেভাবে সুরক্ষা দিয়ে থাকে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও একইরকম সতর্ক আয়োজন।
মানব শরীরের কোন অংশই অপ্রয়োজনীয় নয় কিন্তু এই মস্তিষ্ককে অপরিহার্য বল্লেও কম বলা হবে। পৃথিবীতে অনেক মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা বা অসুখের কারনে হাত, পা, চোখ, নাক, কান ইত্যাদি অঙ্গ ছাড়াই জন্মায়। শুধুমাত্র যদি মস্তিষ্ক ঠিকঠাকমত কাজ করে তাহলে হাজার প্রতিবন্ধকতার মাঝেও সেই মানুষটি করতে পারে বিশ্ব জয়! এরকম বহু উদাহরণ রয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখেছি বিরল ‘কাডল রিগ্রেশন সিনড্রোম’-রোগে আক্রান্ত গনিম আল মুফতাহ নামক এক যুবকের বিস্ময়কর উত্থানের দৃশ্য! জন্ম থেকেই দুই পা বিহীন অবস্থায় নিজেকে পৃথিবীর সব ধরনের বৈরিতার সাথে মানিয়ে নিয়ে আজ একজন মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে হতাশায় আক্রান্ত মানুষদের আলোর দিশা দেখিয়ে চলেছে।
এছাড়া আমরা দেখে থাকি জন্মান্ধ কোরআনের হাফেজ, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক যারা মস্তিষ্কের অসাধারণ ক্যারিশমায় পৃথিবীর মাঝে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছেন। ‘আই জাস্ট কলড টু সে আই লাভ ইউ’ এই তুমুল জনপ্রিয় রোমান্টিক মেলোডিয়াস গানের সঙ্গে কম বেশি সবাই পরিচিত। জন্মান্ধ মার্কিন গায়ক স্টিভি ওয়ান্ডারের গাওয়া এই গানটি আশির দশকে সারা বিশ্বের তরুণদের মুখে মুখে শোনা গেছে। জন্মান্ধ হলেও গান গেয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন আকাশচুম্বি উচ্চতায়। পৃথিবী বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিন্স মাত্র একুশ বছর বয়স থেকে বিরল স্নায়ু রোগে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়েও মস্তিষ্ক সচল থাকায় ছিয়াত্তর বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন এবং হাজারো প্রতিবন্ধকতার মাঝেও বিজ্ঞানের সব জটিল গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলেন।
তাই মানব শরীরের অপরিহার্য এই মহা গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্ক কি, এই সাধারণ তথ্যটি আজ শুধু জেনে নেবো উইকিপিডিয়া থেকে:
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের স্ফীত, তরল দ্বারা পূর্ণ গহ্বরযুক্ত ও মেনিনজেস নামক আবরণী দ্বারা আবৃত যে অংশটি করোটির ভেতরে অবস্থান করে তাকে মস্তিষ্ক বলে। ভ্রুণ অবস্থায় সুষুম্নাকান্ডের অগ্রবর্তী দন্ডাকার অংশ ভাঁজ হয়ে পর পর ৩টি বিষমাকৃতির স্ফীতি তৈরী করে৷ স্ফীতি ৩টি মিলেই গঠিত হয় মস্তিষ্ক৷ প্রাপ্তবয়স্ক লোকের মস্তিষ্কের আয়তন ১৫০০ ঘন সেন্টিমিটার, গড় ওজন ১.৩৬ কেজি এবং এতে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন থাকে। মস্তিষ্ক মেনিনজেস নামক পর্দা দ্বারা আবৃত। মানুষের মস্তিষ্কের প্রধান তিনটি অংশ। যথা- (ক) গুরুমস্তিষ্ক (খ) মধ্যমস্তিষ্ক (গ) লঘুমস্তিষ্ক
(ক) মস্তিষ্কের প্রধান অংশ হলো গুরুমস্তিষ্ক। এটি ডান ও বাম খণ্ডে বিভক্ত। এদের ডান ও বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার বলে। মানব মস্তিষ্কের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার অধিকতর উন্নত ও সুগঠিত।
(খ) গুরুমস্তিষ্ক ও পনস এর মাঝখানে মধ্যমস্তিস্ক অবস্থিত। মধ্যমস্তিষ্ক দৃষ্টিশক্তি,শ্রবণশক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত।
(গ) লঘুমস্তিষ্ক গুরুমস্তিষ্কের নিচে ও পশ্চাতে অবস্থিত। এটা গুরু মস্তিষ্কের চেয়ে আকারে ছোট। লঘুমস্তিষ্ক কথা বলা ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে। এর তিনটি অংশ যথা- সেরিবেলাম, পনস ও মেডুলা।
আমি এই রচনায় মানুষের মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা লিখে খুব বিস্তারিতভাবেই নিজে বুঝতে ও শিখতে চাই। কারন এই ম্যাজিকাল অঙ্গটির মধ্যেই মানুষের সাথে পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর পার্থক্য নির্দেশিত রয়েছে। মস্তিষ্কে বুদ্ধি বা জ্ঞানের এক অলৌকিক সংযুক্তির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা বা প্রকৃতি মানুষকে কথা বলার শক্তি, অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আচরণগত ভিন্নতা এবং বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানব সভ্যতা বদলের নিরন্তর পরিবর্তনের ধারায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। বুদ্ধিমত্তা তো দেখা যায় না, এটি শুধু অনুভূতির ব্যাপার, বায়ু দেখা না গেলেও অস্তিত্ব বোঝা যায় কিন্তু মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তার অনুভব এক অদ্বিতীয় বিষয়। এই মস্তিষ্কেই মানুষের সবকিছু ঘটে থাকে, রাগ, অভিমান, কষ্ট, হতাশা সকল মানবীয় আচরণের উৎস্য এই মস্তিষ্ক।
আমি জানি না মস্তিষ্কের যাবতীয় তথ্য জানতে আমার কতটি পর্ব লিখতে হবে, আমি বুঝতে পারছি না আমার লেখার কিছুটা অংশও কারো জানার ইচ্ছেকে পূরণ করতে সক্ষম হবে কিনা? সে যাই হোক, একশত পর্ব লিখতে হলেও ঘিলুর ক খ গ ঘ আমাকে জানতেই হবে। আশা করি সমঝদার পাঠকবৃন্দ আমার সাথে ধৈর্য্য ধরে থাকবেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে বাধিত করবেন।
(চলবে)
পল্লব খন্দকার, ১৩ নভেম্বর ২০২৩।