আমাদের মস্তিষ্ক কি করে এই প্রশ্ন না করে আমাদের মস্তিষ্ক কি করে না সেটাই উপযুক্ত প্রশ্ন হবে। আমার দার্শনিক চিন্তার জগতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী যদি বলি সেটা অনেকের বিশ্বাসে আঘাত আনতে পারে তবুও সতর্কভাবেই না বলে পারছি না যে মানুষের মস্তিষ্কই তাঁর অস্তিত্বের একমাত্র বিধায়ক! আরো পরিষ্কার করে বলা যায় মস্তিষ্কেই বাস করেন সৃষ্টিকর্তা, আপনার সমগ্র ধ্যান ধারণার প্রকাশিত তত্ত্ব ও তথ্যসমূহ আপনার মস্তিষ্কজাত। আবার যদি উল্টো করে ভাবেন সেক্ষেত্রেও বলা যায় আপনার মস্তিষ্কেই শয়তান বা ইবলিশের বসবাস। আপনার মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আপনি মহামানব অথবা মহাদানব, আপনি অসুর বা রাবণ সেই রসায়ন সূত্র উদ্ভব হয় আপনার মস্তিষ্কেই। আপনি আস্তিক নাকি নাস্তিক সেই সিদ্ধান্ত তৈরি হয় আপনার মস্তিষ্কে।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ঠিক পূর্ব মূহুর্তে পাকিস্থানী বাহিনী পরাজয়ের আঁচ পেয়ে শেষ চেষ্টা হিসেবে আলবদর আলশামস সদস্যদের সহযোগিতায় দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনার পিছনে একটাই উদ্দেশ্য ছিলো ব্রেইন কিলিং অফ এ নেশন। আমাদের শ্রেষ্ঠ্য সন্তানদের হত্যার মাধ্যমে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো পাক বাহিনী সেটি অনেকাংশে সফল হয়েছে তা আজকের বহু উচবুক ও দলকানা বুদ্ধিজীবীদের দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়। জহির রায়হান ও শহিদুল্লাহ কায়সারের মতো চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক বেঁচে থাকলে বাংলা চলিচ্চিত্র বহু পূর্বেই বিশ্বদরবারে একটা আলাদা অবস্থা করে নিতো একথা নির্দিধায় বলা যায়। অন্যদিকে আমরা ইহুদী সম্প্রদায়ের মানুষদের ব্রেইনকে কতোটা বেশি করে হিসেবে নিই সেটা হিটলারের ইহুদী নিধনের পরিকল্পনা ও কার্যকলাপ দেখেই সকলে বুঝে নিয়েছে।
আমরা খুবই টেনশন করি, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, ব্রেইন স্ট্রোক বা হার্ট ফেইল পর্যন্ত হয়ে মারা পড়ি এগুলো কোথায় ঘটে? আপনার আমার মস্তিষ্কে, এই সেই প্রেমনগর অথবা যন্ত্রণার সূতিকাগার, এই মস্তিষ্ক আপনার আল্লাহ অথবা ভগবান। আপনার মস্তিষ্কই আপনাকে চালায়, শাসন করে, খুশি রাখে অথবা এংজাইটির মধ্যে পতিত করে, আপনি যেভাবে মস্তিষ্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন সেভাবেই আপনি নিজেকে আবিষ্কার করবেন। আপনি চট করে কোন কথায় উত্তেজিত হয়ে পড়বেন নাকি পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাবেন তা নির্ধারণ করবে আপনার মস্তিষ্ক। কঠিন বিপদ ঘটে যাবার ন্যানো সেকেন্ড পূর্বে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক এই মস্তিষ্ক, আবার বিপদের সময় খেই হারিয়ে ভুলের জটে পা আটকে যাবার জন্যও দায়ী সেই মস্তিষ্ক।
উইকিপিডিয়া থেকে এবার দেখে আসি মস্তিষ্কের প্রথম অংশের আংশিক বর্ণনা। দুটি বড়, কুন্ডলী পাকানো ও খাজঁ বিশিষ্ট খন্ড নিয়ে সেরিব্রাম (cerebrum) বা গুরুমস্তিষ্ক গঠিত। গুরুমস্তিষ্ক দুইটা খাজবিশিষ্ট অংশ নিয়ে গঠিত যাকে সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার বলা হয়। সেরেব্রাম মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশকে আবৃত করে রাখে। খন্ড দুটি ভেতরের দিকে কর্পাস ক্যালোসাম নামে চওড়া স্নায়ুগুচ্ছ দিয়ে যুক্ত। পৃষ্টতল নানা স্থানে ভাজঁ হয়ে উচুঁ নিচু অবস্থায় থাকে। উচুঁ জায়গাকে জাইরাস এবং নিচু জায়গাকে ফিসার বলে। মানুষের ক্ষেত্রে সেরেব্রাম সবচেয়ে বড় এবং উন্নত এবং এটা পাচটা বৃহত্তম খণ্ডে বিভক্ত।
গুরুমস্তিষ্ক পৃথক হয়েছে (অনুদৈর্ঘ্য বরাবর) দুইটা সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারে, যার নাম ডান হেমিস্ফিয়ার এবং বাম হেমিস্ফিয়ার। ডান হেমিস্ফিয়ার শরীরের বাম অংশের সিগন্যাল গ্রহণ করে এবং তাকে প্রক্রিয়াজাত করে বাম অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং বাম হেমিস্ফিয়ার করে তার উল্টোটা। দুইটা হেমিস্ফিয়ারের শক্তিশালি বাইল্যাটারাল সিমেট্রি থাকলেও সেটা সম্পূর্ণ নয়। তবে দুইটা হেমিস্ফিয়ারের কার্যক্রমের কিছুটা পার্থক্য আছে বলে ধারণা করা হয়। এই কর্মকান্ডগুলো কি কি একটু চ্যাটজিটিপির সহযোগিতা নিয়ে দেখে নিই।
Left Hemisphere:
Right Hemisphere:
(চলবে------------------------)
পল্লব খন্দকার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।