গত পর্বে গুরু মস্তিষ্কের ডান ও বাম হেমিস্ফিয়ার নিয়ে সামান্য কিছু তথ্য পাঠকের সামনে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছিলাম। আসল কথা হলো আমি চিকিৎসকও নই বা চিকিৎসা জগতের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউও নই, আমার কাছ থেকে বিরাট কোন জ্ঞান গ্রহণের আশা নিশ্চিত কোন পাঠক করতে যাবেন না। একদম প্রাথমিক তথ্য সন্নিবেশন করে আমি মানব দেহের আভ্যন্তরীণ বিজ্ঞানের কিঞ্চিৎ নিজে বুঝতে চেষ্টা করছি ও আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে চলেছি। আমি খুব ভালো করে জানি এমন বিষয়ে আমাদের দেশে সমঝদার পাঠকের সংখ্যা খুব হাতেগোনা হয়ে থাকেন। যেহেতু আমি সমগ্র মানব দেহটাকেই বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ্য পাঠ হিসেবে মানি, মহান দার্শনিক সক্রেটিসের Know thyself বা নিজেকে জানার উপদেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই বিজ্ঞানের একজন নগন্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার উপলব্ধির এই জায়গাটি সৃষ্টি হয়েছে। আপনার দেহটাকে বিজ্ঞানের ভাষায় পড়তে পারলে অনেক দূর্বোধ্য প্রশ্নের জবাব পাওয়া সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস।
গুরু মস্তিষ্ক সমগ্র মস্তিষ্কের প্রায় ৮০ ভাগ ওজনের সমান হয়ে থাকে, তাই এই অংশটিতে বিভিন্ন অঙ্গানুর সমন্বয় ঘটেছে। আগের পর্বে সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের দুটি অংশের গঠন ও কাজের আংশিক বর্ণনা দিতে চেষ্টা করেছিলাম আজ থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালামাস নিয়ে কিছু অনুশীলন করে পরের অংশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করবো। কক্ষ বা থ্যালামাস, “কক্ষ” বা “প্রকোষ্ঠ” মধ্য মস্তিষ্ক এবং বহিঃগুরুমস্তিষ্কের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত একটি দ্বিপ্রতিসম কাঠামো। এটি বহিঃগুরুমস্তিষ্কের সংবেদী স্নায়ুকোষ ও চেষ্টীয় স্নায়ুকোষের অনুপ্রচার কেন্দ্র (রিলে স্টেশন) হিসেবে কাজ করে। এটি মস্তিষ্কের তৃতীয় গহ্বরটিকে আবদ্ধ করে রাখে। এটি চাপ, স্পর্শ, যন্ত্রণা প্রভৃতি স্থুল অনুভূতির কেন্দ্র, আবেগের কেন্দ্র ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে৷ এটি মানুষের বাক্তিত্ব ও সামাজিক আচরণের প্রকাশ ঘটায়। ঘুমন্ত মানুষকে হঠাৎ জাগিয়ে তোলা ও পরিবেশ সম্বন্ধে সতর্ক করে তোলে। থ্যালামাসের বিভিন্ন অংশ সমূহ (এপিথ্যালামাস, সাবথ্যালামাস ও মেটাথ্যালামাস) মানবদেহের অত্র অতীব জরুরী কার্যক্রম সমূহ সম্পন্ন করে থাকে।
অন্যদিকে অবকক্ষ বা হাইপোথ্যালামাস গুরু মস্তিষ্কের একটি অংশ যা থ্যালামাসের ঠিক নিচে অবস্থিত ও ধূসর পদার্থ দ্বারা নির্মিত একটি কাঠামো। হাইপোথ্যালমাস হাইপোফাইসিয়াল ট্র্যাক্ট দ্বারা পিটুইটারি গ্রন্থের সাথে যুক্ত থাকার মাধ্যমে স্নায়ু তন্ত্রের সাথে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির সংযোগ ঘটায়। হাইপোথ্যালমাস শ্বসনজনিত কিছু কাজ ছাড়াও সয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কিছু কাজ করে। এটি কতিপয় হরমোন সৃষ্টি ও ক্ষরণ করে যাদের অবকক্ষীয় উদ্বোধক রস বা বিমুক্তকারী উদ্বোধক রস (রিলিজিং হরমোন) বলে। আর এরই প্রভাবে এরা পিটুইটারি গ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত কিংবা নিবৃত করে। হাইপোথ্যালমাস শরীরের তাপমাত্রা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুমের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকে।
আজকের জ্ঞান সংগ্রহের সর্বশেষ অংশ পিটুইটারি গ্রন্থি নিয়ে।
পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary gland) হলো একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি, মানব শরীরে যার ওজন ০.৫ গ্রাম (০.০১৮ আউন্স), এটা মস্তিষ্কের নিম্নাংশের হাইপোথ্যালমাসের নিম্নাংশ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। এটি স্ফেনয়েড অস্থির হাইপোফাইসিয়াল ফসাতে অবস্থিত। পিটুইটারি গ্রন্থির ৩টি অংশ আছে। যথাঃ– (১) সম্মুখ অংশ (anterior lobe)/অ্যাডিনোহাইপোফাইসিস (২) মধ্য অংশ (intermediate lobe) (৩) পশ্চাৎ অংশ (posterior lobe)/ নিউরোহাইপোফাইসিস।
পিটুইটারি গ্রন্থির ব্যাপক কার্যকলাপের জন্য একে অন্তঃক্ষরা সুইচ বোর্ড (endrocrinological switch board), প্রভু গ্রন্থি (master gland) নামেও অভিহিত করা হয়।
আমি প্রত্যেক পর্ব শেষ করি মানদেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশের চ্যাট জিপিটির ইংরেজি ব্যাখ্যা দিয়ে, কারন এই ইংরেজিগুলো অনেক সহজভাবেই অনেক কঠিন অংশের বর্ণনা করে থাকে।
(চলবে————————)
পল্লব খন্দকার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।
Leave a Reply