ইদানিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার পরিমান বেড়ে গেছে; এটা একটা অশনি সংকেত। আমি মানসিক ডাক্তার নই, তবে আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আমার ছেলেমেয়েদের কিছু কথা বলিঃ
১) আত্মহত্যা কি?
ডিপ্রেশন একটি মানসিক অসুখ; আত্মহত্যা মানসিক অসুস্থতার চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।
২) আত্মহত্যার কারন কি?
আত্মহত্যার কারন যা-ই হোক না কেন সেটা তোমার মনের ভিতরের অসুখ বা সমস্যা। যদিও মানুষ বাইরের কারন দেখিয়ে আত্মহত্যা করে এটি আসলে একটা অজুহাত মাত্র। যারা আত্মহত্যা করার মত মানুষ তারা বুঝে বা না বুঝে উপযুক্ত অজুহাত খুঁজে বেড়ায় এবং একসময় তা পেয়েও যায়। মানুষ যে কারনে আত্মহত্যা করে সেই কারন শুধু তার একার জীবনে ঘটেছে, এমন কখনোই হয় না। একজন মানুষ যে কারনে আত্মহত্যা করে সেই একই কারন লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের জীবনে অতীতে ঘটেছে, বর্তমানে ঘটছে এবং ভবিষ্যতে ঘটবে; তাই বলে কি সবাই আত্মহত্যা করে?? তারাই আত্মহত্যা করে যাদের মধ্যে আত্মহত্যার বীজ (ডিপ্রেশন) আছে।
৩) কারা আত্মহত্যা করার বেশি ঝুঁকিতে আছে?
যারা একটু ইন্ট্রোভাট টাইপের মানুষ; বন্ধুবান্ধব কম, জড়তা বেশি, ইমোশনাল বেশি, নেগেটিভ মেন্টালিটির মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে আছে। যাদের মাঝে মধ্যে মনে হয়, এই জীবন আর রেখে লাভ কি; এর চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল অথবা যারা একবার হলেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তাদের অবশ্যই মানসিক ডাক্তারের চিকিৎসা নেওয়া উচিৎ; শুধু মোটিভেশনে তোমার কাজ হবে না, তোমার ওষুধ প্রয়োজন। কারন তাদের মধ্যে আত্মহত্যার বীজ রয়েছে; এটা অনুকুল পরিবেশ পেলেই তা মাথা চাড়া দিতে পারে; সেই মুহূর্তে তুমি তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, তাই আগেই সতর্ক হও।
৪) আত্মহত্যা থেকে বাঁচার উপায় কি?
কনফিডেন্স, নৈতিকতা, ইতিবাচকতা, কৃতজ্ঞতা বাড়াও; নেতিবাচকতা, ইমোশন, স্বার্থপরতা কমাও; ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চল। অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা না করাই ভাল; যদি তুলনা কর তাহলে তোমার থেকেও যারা খারাপ অবস্থায় আছে তাদের সাথে তুলনা কর। ইন্ট্রোভাট হলে মানুষের সাথে মেশো; ভাল বন্ধুদের সাথে সব শেয়ার কর, বই পড়। একটা কথা মাথায় রাখবা জীবনে কোন কিছুই বা কোন মানুষ-ই তোমার জন্য অপরিহার্য নয়; জীবনের জন্য একমাত্র অপরিহার্য হচ্ছে বেঁচে থাকা; জীবন থাকলে জীবন বদলাবেই!
৫) আত্মহত্যা করলে কি ক্ষতি?
আত্মহত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে হাড়ে হাড়ে টের পাবা জীবনের কি ক্ষতি করেছ; আর যদি সফল হও তাহলে অনন্তকাল দোজখে ফ্রি বসবাসের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আত্মহত্যা সাধারণত স্বার্থপর লোকেরা করে, তাই অন্য কার কি হল সেটা তার মাথায় থাকে না; এই জন্য আপনজনেররাও তাকে বেশীদিন মনে রাখে না। তুমি মারা গেলে একটু শান্তিতে তোমার আপনজনেরা কান্নাকাটি করবে সেই উপায়ও তো তাদের থাকে না, সামাজিক অপমান আর পুলিশের ঝামেলা সইবে নাকি তোমার জন্য কান্নাকাটি করবে??
৬) আত্মহত্যার কি কোন ভাল দিক নাই?
হ্যাঁ, আছে; দেশের জন্য; মানুষের জন্য বা কোন বৃহত্তর কল্যানে যদি মারা যাওয়ার দরকার হয় সেটা গর্বের (যদিও সেটা আত্মহত্যা হয়, আত্ম উৎসর্গ)। বাকি সব কারনেই আত্মহত্যা খুব অসম্মানজনক কাজ; এর মধ্যে সবচেয়ে নীচু ধরনের আত্মহত্যা হচ্ছে প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে আত্মহত্যা! অনেকে ভালো চাকুরি না পেয়েও দূর্ভাগ্যজনকভাবে আত্মহত্যার মত জঘন্য কাজটি বেঁছে নেয়!
সব শেষে আত্মহত্যা নিয়ে আমার উপলব্ধির কথা বলি!! অনেকের কাছে কথাটা রুঢ় লাগতে পারে; তবে আমি মনে করি, যে আত্মহত্যা করে আসলে তার দুনিয়ায় বেঁচে থাকার যোগ্যতা নেই। দুনিয়াটা কি এবং কেন সে এই দুনিয়ায় এসেছে সে সেটাই জানে না। আত্মহত্যা যে কারনেই করোনা কেন আসলে তুমি একটা অকৃতজ্ঞ; মা-বাবার প্রতি অকৃতজ্ঞ; সৃষ্টিকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ; তুমি লোভী, তোমার শুধু চাই চাই; জীবনে কিছু যে ত্যাগ করতেও হয় সেটা তুমি শেখোনি। তাই কেউ আত্মহত্যা করলে তার প্রতি আমার করুনা ছাড়া আর তেমন কিছু হয় না।
ড. মাহবুব
(ফেসবুক পোষ্টটি মূলত মোরাল প্যারেন্টিং এর স্টুডেন্টদের জন্য)
#নৈতিকসমাজগঠনের_প্রত্যয়ে Moral Parenting
www.moralparenting.org
Leave a Reply