হযরত উমার ফারুক রা. তখন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। মুসলিম জাহানের কাছে তিনি আমিরুল মোমেনীন খেতাবে পরিচিত। তখন একদিন এক আরব বেদুইন এসে খলিফাকে বলল, হে উমার! তুমি গণিমতের মাল ও কোষাগারের মালের নায্য বন্টন করো না। একথা শুনে হযরত উমার রা. প্রচন্ড রেগে গেলেন। তার চেহারায় রাগের প্রভাব দেখা গেল। কারণ তিনি তো এরকমটা করেননি। তখন পাশে থাকা একজন সাহাবা বললেন, আমিরুল মোমেনীন আল্লাহ তা'লা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, "ক্ষমাশীল হোন, ভালো কাজের নির্দেশ দিন আর মুর্খদের এড়িয়ে চলুন। সুরা আরাফ-১৯৯।
এই কথা শুনে হযরত উমার রা. তাৎক্ষণিক লোকটাকে ক্ষমা করে দিলেন।
ইসলামে আনুগত্যের বিধান আছে। আল্লাহর রাসুল সা. কে এবসোলিউট আনুগত্য ও ভালবাসা দেখানোর জন্য বলা আছে। পৃথিবীর মধ্যে - একজন মুসলিমের কাছে একমাত্র রাসুল সা. সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে ও সর্বাধিক ভালবাসা পাবেন। কিন্তু বাকি কারো জন্য এই এ্যাবসোলিউট আনুগত্য ও ভালবাসা দেখানোর কথা বলা নেই। গণতান্ত্রিক দেশে দলের নেতাকে তার কর্মীরা এবসোলিউট আনুগত্য দেখাতে পারে, সেটি কর্মীর দলীয় আনুগত্যের ও দলের নীতি চর্চার ব্যাপার। কিন্তু বিরোধী গ্রুপ/সাধারণ নাগরিক যে কোন দলের নেতাকে সমালোচনা করতেই পারে। সেই স্পেইস আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। যদি সেটি কোনো দলে না থাকে তাহলে মুজিব ধর্ম আর সেই দলের আচরণের ভেতর বিশেষ কোনো পার্থক্য নাই। আচরণে ফ্যাসিস্ট, অর্থাৎ দলবদ্ধভাবে আদর্শ/চেতনা জারি রাখার চেষ্টা। একজন মুজিব অনুসারী যেরকম মুজিব সমালোচনা সহ্য করে না, তেমনই বিষয় যদি কোনো দলের শীর্ষ নেতার জন্য প্রযোজ্য হয় তা হলে ঐ দল ফ্যাসিস্ট আদর্শ ভেতরে ভেতরে ধারণ করেন। তবে হ্যাঁ, দলীয় প্রধান যদি কখনো রাষ্ট্রপ্রধান হন আর তার নির্দেশ কোনো নাগরিক অমান্য করে, বিদ্রোহী গ্রুপ তৈরি করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, তাহলে তখন বিদ্রোহীকে দমনের প্রসঙ্গ আসে এবং তখন আইনী প্রক্রিয়ায় তার সাজা হবে।
আমি কথাগুলো যখন বলছি, আমি নির্ভয়ে লিখতে পারছি না, আমার ভেতর একধরনের ভয় কাজ করছে। তবুও আশা করছি স্বৈরাচার মুক্ত দেশে সব দলের নেতাকর্মীরা বিষয়গুলো মর্মে অনুধাবন করবেন। এলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই সমালোচনা করার স্পেইস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশ নায়ক জনাব তারেক রহমান নিজেরই ব্যঙ্গ কার্টুন ফেসবুকে শেয়ার করে শিল্পীদের উৎসাহিত করেছেন। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক। বাংলাদেশে অবস্থিত অন্য সব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উচিত এই বিষয়ে উন্মুক্ত সমালোচনার আহ্বান জানানো। তাহলে আমরা মুজিব ধর্ম চর্চার কালচার থেকে বের হতে পেরেছি বলে সাধারণ নাগরিকরা উপলব্ধি করতে পারবো।
কোনো দলের কেউ যদি আমার উপরোক্ত কথার সাথে দ্বিমত থাকেন তাহলে পাল্টা যুক্তি দিয়ে আমাদেরকে বোঝাবেন কেন আপনার নেতা সমালোচনার ঊর্ধ্বে? আপনার যুক্তি ঠিক হলে আমরা অবশ্যই আপনার সাথে একমত হতে পারি।
লেখা: মোঃ রবিউল ইসলাম।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।