https://www.moralparenting.org/
মোঃ মোজাহিদুল হক
-শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আমি এখন পড়াশোনা করছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে। হাজারো প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গিয়ে আমি যে কোনদিন এতদূর আসতে পারবো তা স্বপ্নেও কখনো ভাবি নাই। ছোটবেলা থেকেই আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল খুবই ছোট ছোট। কারণ আমার জন্ম যে এক হত দরিদ্র পরিবারে! আমার তো বড়জোর দিনমজুর অথবা সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরির সুযোগ পাবার কথা। আজ দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া এবং এ পর্যন্ত আসার পিছনে রয়েছে নিজের প্রতি দৃঢ় আত্নবিশ্বাস, হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম ও কিছু মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত আমার পড়াশোনা মোটামুটি ভালোই চলছিল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন এক রাতে ঝড় ও বৃষ্টিতে আমাদের ঘর ভেঙ্গে যায়। এক নিমেষে আমরা হয়ে যাই গৃহহীন। আমাদের অবস্থা এতোই খারাপ ছিল যে ঘর মেরামতের জন্যও কোন টাকা সংগ্রহে ছিল না। ধারদেনা করে ঘর ঠিক করে আমার বাবা-মা ও ভাই ঢাকায় আসেন ভালো উপার্জন করার আশায়। আমি আমার দাদা-দাদির কাছে গ্রামে থেকে যাই। কিন্তু ঢাকা গিয়ে কয়েক মাসের মধ্যে আমার আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়েন। উনার চিকিৎসা চালানো, সংসার চালানো, তার উপর আমার পড়াশোনার খরচ, এসব বহন করা আমার মা ও ভাইয়ের জন্য খুবই কঠিন হয়ে যায়। এরপরও আমার বড় ভাই আমাকে আশ্বাস দেন, বলেন- তুই পড়াশোনা চালিয়ে যা, তোর সব খরচ আমি দিবো।
এভাবেই বড় ভাইয়ের কষ্টের রোজগারে আমার এসএসসি পরীক্ষা কোনমতে পার হয়ে যায়। আমি GPA-5.00 পেয়ে উত্তীর্ন হই! এতো প্রতিবন্ধকতার মাঝেও মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফলাফল ভালো করতে পেরে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। সাহস করে ও বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ভর্তি হই রংপুর সরকারি কলেজে। কলেজে লেখাপড়া করার সময় আমার ভাই আর মা মিলে কিছু টাকা দিতেন, বাকিটা আমি টিউশনি করে যোগাড় করতাম। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! হঠাৎ আমার ভাইও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দীর্ঘ ১ মাস চিকিৎসা করার পরেও তিনি মারা যান। বড় ভাইয়ের চিকিৎসার পিছনে আমাদের অনেক টাকা দেনা হয়ে যায়। আমার আব্বার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া, সংসার চালানো, ভাইয়ের চিকিৎসার দেনা পরিশোধ করা আমার মায়ের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তখন আমার পড়াশোনা মোটামুটি বন্ধের পথে, আমিও মানসিকভাবে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে প্রস্ততি নিচ্ছিলাম ঢাকায় গিয়ে কিছু একটা কাজ নিয়ে উপার্জন করার। কিন্তু আমার প্রতি অকৃপণ ভালোবাসা নিয়ে আমার এলাকার এক সেচ্ছাসেবক বড় ভাই মোঃ মোরশেদুল হক এগিয়ে আসেন। উনি আমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে মাসিক ৩০০০ টাকার ব্যবস্থা করে দেন এবং আমাকে কাজ না করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেন। পরিবারের এইসব আর্থিক দূরবস্থা, আব্বার অসুস্থতার কথা আমার কলেজের এক বন্ধুর সাথে শেয়ার করলে সে আমাক মোরাল প্যারেন্টিং ট্রাস্টের কথা বলে। ওর পরামর্শ মতো আমি বৃত্তির জন্য আবেদন করি এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে বৃত্তির জন্য মনোনীত হই।
কলেজে পড়ায় মোরাল প্যারেন্টিং ট্রাস্ট থেকে আমি ১৪০০ টাকা করে পেতাম ঐ সময়। সত্যি কথা বলতে সেই ১৪০০ টাকাই ছিল তখন আমার কাছে ১৪ হাজার টাকার সমান। দুই মাস পর যখন টাকা আনতে যেতাম টাকাটা হাতে পেয়ে আমি অন্য রকম এক প্রশান্তি অনুভব করতাম, একজন অদেখা মোরাল প্যারেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মনটা ভরে যেতো। এভাবেই মোরশেদ ভাই আর মোরাল প্যারেন্টিং ট্রাস্টের সহায়তায় আমি উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। এইচএসসি পরীক্ষাতেও আমি GPA-5.00 পেয়ে উত্তীর্ন হই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেয়াটাও আমার সাধ্যের বাইরে ছিল, সৌভাগ্যবশতঃ এই ভর্তি প্রস্তুতির সময়ও মোরাল প্যারেন্টিং ট্রাস্ট থেকে বৃত্তির টাকাটা পেয়েছি যা আমার জন্য খুবই সহায়ক ছিল। আমার মতো অতি দরিদ্র পরিবারের একজন সন্তানকে আজ বড় স্বপ্ন দেখানোর এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে যেভাবে ভালোবাসা দিয়েছেন আমি জানি সেই অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতিদান দেয়া কখনোই সমভব নয়, সে চেষ্টা আমি করবো না। শুধু সুযোগ পেলে আমিও হবো আমার মতো সুবিধাবঞ্চিত বা দূর্ভাগ্য তাড়িত কোন শিক্ষার্থীর নৈতিক অভিভাবক।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দিবাস্বপ্নই থেকে যেতো যদি মোরাল প্যারেন্টিং ট্রাস্ট এভাবে আমাক সাহস না দিত, আমার পাশে এসে অভিভাবকত্বটুকু না দিতো। আমার পরিবার যেখানে আমার স্বপ্ন পূরনে ভুমিকা রাখতে পারে নাই সেখানে আমার মোরাল প্যারেন্ট জাহিদ ফারুকী স্যার এবং ড. মাহাবুব স্যার আমাকে স্বপ্ন পূরণে অব্যাহতভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন। আমি চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মোরাল প্যারেন্টিং ট্রাস্টের প্রতি। আপনাদের দেয়া সাহস ও সহযোগিতায় আমি আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এভাবেই মোরাল প্যারেন্টিং ট্রাস্টের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠুক সারা বাংলাদেশ।
Moral Parenting Trust
8/2 Indira Road, West Raja Bazar, Farmgate, Dhaka 1215
Permanent Address: Village – Sonakur, P.O. – Pulum, Thana – Shalikha, Magura
Email: moralparenting@gmail.com
Facebook Page: https://www.facebook.com/MoralParenting
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।