https://www.moralparenting.org/
আসসালামু আলাইকুম, আমি মো: শরিফুল ইসলাম, একজন মরাল চাইল্ড। আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ হতে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি। প্রতিটি মানুষের জীবনে বলার মতো কিছু গল্প থাকে, কিন্তু আমার সেরকম এখনো বলার মতো কিছু হয়নি। তবুও “Moral Parenting Family ” এর একজন মরাল চাইল্ড হওয়ায় কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমি কিছু বলতে চাই…….
আমরা ৫ ভাইবোন (৩ বোন ২ ভাই), বাবা একজন কৃষক, মা গৃহিণী। যেটুকু জমি ছিল সেখানে ফসল হলে বন্যার পানিতে নস্ট হয়ে যেত। একদম নদীর কোল ঘেঁষে আমাদের বাড়ি, ২-৩ দিন টানা বৃষ্টি হলে নদীর পানি বেড়ে গিয়ে উঠানে এমনকি ঘরে পর্যন্ত পানি ঢুকতো। অনেক সময় এমনো হয়েছে রাস্তায় গিয়ে টিনের চালা তুলে থাকতে হয়েছে। একদম প্রত্যন্ত গ্রাম বলতে যা বোঝায়, সেরকম ছিল। প্রাইভেট পড়তে গেলে ৬/৭ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল পাড়ি দিয়ে শহরে পড়তে যেতে হতো। বাবা সবসময় বলতেন, আমার কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স নাই, অঢেল টাকা পয়সা নাই, তোমরাই আমার ব্যাংক ব্যালেন্স।
বাবা সবসময় তার সাধ্যমত চেষ্টা করতেন। আমরা বাড়িতে মেসের মতো থাকতাম, যে যার মতো পড়াশোনা করতাম, বাবা – মার কাজে সহায়তা করতাম। মা রান্না হলে ৫ টা প্লেটে ভাত বেড়ে দিতেন, একটা ডিম ভাজলেও ৫ টা ভাগ করে দিতেন আমাদের। আল্লাহর রহমতে আমরা ৫ ভাইবোনই এখন শিক্ষিত, কিছুটা হলেও বাবা- মা’র কস্ট লাঘব করতে পেরেছি। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় কেউ সহজে দাওয়াত দেয়ার সাহস পেতো না। এতোগুলো মানুষ যদি একবারে যাই? বাবা খুব আত্মসম্মানি মানুষ, কারো কাছে কিছু চাইতেন না, নিজে কঠোর পরিশ্রম করেছেন আমাদের জন্য। মা সবসময় পড়াশোনার খোজ নিতেন, পাশে বসে থাকতেন, পড়াশোনা করছি কিনা। এখন বাবা কোনো কাজ করতে পারেন না, শুধু রুম আর বাথরুম পর্যন্ত তিনি চলাচল করতে পারেন। বাচ্চা মানুষের মতো হয়েছেন, সবসময় ফোন দিয়ে বলেন বাবা বাড়ি কবে আসবি, তোর আরো কতদিন লাগবে চাকরি হতে। বাসায় যখন যাই, খুব করে চাই বাবা মায়ের জন্য মন ভরে খরচ করে নিয়ে যাই। কিন্তু আমি যে এখনো বেকার ,মা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন, দীর্ঘদিন ধরে তার চিকিৎসা চলছে।
আমি গাইবান্ধা জেলা স্কুলে ভর্তি হই, JSC তে বৃত্তি পাই, রোল সবসময় ১-৫ এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছি, SSC তে গোল্ডেন জিপিএ -৫.০০ পাই, বোর্ড বৃত্তিও পাই। এরপরে গাইবান্ধা সরকারি কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়ে এইচএসসি পাশ করি। ভর্তি যুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা সাবজেক্ট পেয়ে যাই, কিন্তু পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। আমি প্রতিটি সেমিস্টারে আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রথম হয়েছি, অনার্সে CGPA: 3.74 পেয়ে ডিপার্টমেন্ট ২য় স্থান অর্জন করি এবং মাস্টার্সে CGPA: 3.81 পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করি। একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করায় বঙ্গবন্ধু মেরিট স্কলারশিপ পেয়েছিলাম (ডিপার্টমেন্ট ১ম, ২য় এবং ৩য় স্থান অর্জনকারীদের এই বৃত্তি দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে)।
পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক মহোদয়গণের সাথে রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে কাজ করেছি কখনো ভলান্টিয়ার হিসেবে আবার কখনো ক্যাম্পাস এম্বাসেডর হিসেবে। আবার কখনো ফেলোশিপ আবার ইন্টার্নশিপের কাজও করেছি। মাস্টার্সে থিসিস করার সুযোগ পেয়েছি এবং বর্তমানে গবেষণা কাজ করছি। আমি সবসময় চেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো মহান পেশার সাথে যুক্ত হতে। জানিনা সফল হতে পারবো কিনা, তবে চেষ্টা করছি। পাশাপাশি বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের পুরোপুরি প্রস্তুতি নিচ্ছি। অন্য চাকুরির জন্যও চেষ্টা করছি, যেন ভালো কিছু করতে পারি, ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি।
আমার গ্রাজুয়েশন সুষ্টভাবে সম্পন্ন হওয়ায় যে মানুষদের অবদান সবচেয়ে বেশি আমি তাদের নিকট চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে আমার পরিবার। পরমপ্রিয় পিতৃতুল্য শ্রদ্ধেয় ডঃ মাহবুবুর রহমান স্যার, আমার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ, শ্রদ্ধেয় মরাল প্যারেন্ট জিনাত হক ম্যাডাম, ডিপার্টমেন্টের শ্রদ্ধেয় স্যার/ম্যাডামবৃন্দ এবং শুভাকাঙ্খীবৃন্দ। আপনাদের দুজনের জন্য (শ্রদ্ধেয় মাহাবুব স্যার এবং আমার সম্মানিত মরাল প্যারেন্ট) সবসময় মোনাজাতে স্মরণ করি। আমি দীর্ঘ ৩ বছরের বেশি সময় ধরে বৃত্তি পেয়ে আসছি, এজন্য আমি তাঁদের দুজনের প্রতি প্রতি চিরঋণী। আমার খুব ইচ্ছে করে আপনাদের সাথে যদি দেখা করার সুযোগ পেতাম একবার…….
আমি যখনই সমস্যায় পড়েছি একবুক আশা নিয়ে আমি শ্রদ্ধেয় মাহাবুব স্যারকে এবং আমার মরাল প্যারেন্ট শ্রদ্ধেয় ম্যাডামকে পাশে পেয়েছি। আজ আমি যতটুকু সামনে অগ্রসর হয়েছি তা আপনাদের সহোযোগিতা আর ভালোবাসা, আন্তরিকতায় সম্ভবপর হয়েছে। আপনাদের মতো মহান মানুষ এখনো পৃথিবীতে আছেন বলেই আমরা স্বপ্ন দেখার সাহস পাই, সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাই। আমার উপর বিশ্বাস রাখার জন্য আপনাদের প্রতি বিনম্রভাবে কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আমি সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি, প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজের পায়ে দাড়ানোর।
আমি বরাবরের মতো সামনের দিনগুলোতে আপনাকে, আমার মরাল প্যারেন্টিং পরিবারকে এবং আমার শ্রদ্ধেয় মরাল প্যারেন্টকে পাশে পাবার আশা ব্যক্ত করছি। পাশাপাশি আমার খুব কাছের ছোটোভাই জান্নাতকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমাকে এই মহান পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করে দেয়ার জন্য। এই মরাল প্যারেন্টিং পরিবারের সদস্য হিসেবে ভবিষ্যতে আমার আরো ভাই- বোনদের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাবো এই অঙ্গীকার করছি।
সংকলন: দৈনিক আলোকবর্তিকা।
Leave a Reply