চারিদিকে হতাশা! সারা বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হচ্ছে হতাশার তীব্র প্রতিক্রিয়া! চলমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, সাম্প্রতিক ইসরাইল-প্যালেস্টাইন নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ, গত কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলমান ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্থান, সিরিয়া যুদ্ধের নৃশংসতা এবং সর্বত্র “জোর যার মুল্লুক তার” এর অনৈতিকতা, ধর্মের নামে উগ্রবাদীদের সন্ত্রাস, আফ্রিকার দেশে দেশে যুদ্ধ ও ক্ষুধাতুর মানুষের হাড্ডি জিরজিরে ছবি দেখে দেখে আর অবিচার বা বিচারহীনতার সংষ্কৃতি সহ্য করতে করতে মানুষগুলোর অনুভূতি মৃতপ্রায়!
এই ধারাবাহিকতায় বিশ্বায়নের অন্যান্য উপাদানের মত নৃশংসতাও আমাদের রক্তে অভিযোজিত হয়ে পড়েছে! তাই খুন, ধর্ষণ, গুম, এসিড সন্ত্রাস, বাস/ট্রাক চাপা দিয়ে ঠান্ডা মাথায় হত্যা, শিশু ও নারী নির্যাতন, পৈচাশিক উল্লাসে গণধর্ষণ, আগুনে ঝলসে দেয়া, ভিন্ন মতকে হিংস্রভাবে দমন, বন্দুকযুদ্ধের নাটক কোন নৃশংসতাই আর আমাদের পোড়ায় না!
ইদানিং আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এসে স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে ইমোজি ব্যবহার করে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েই আমাদের দায়িত্বকে দাফন করবার সুব্যবস্থা আছে! খুবই হতাশার বিষয় হচ্ছে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন এখন জায়েজ এবং ওপেন সিক্রেট! স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত! গভীর হতাশার বিষয় যে আমি নিজেই যখন এসব বিষয়ে সুবিধা নিতে যাচ্ছি তখন তা সঠিক, অন্যরা যখন সুবিধা নিচ্ছে আমরা তখন জঘন্য কর্মকান্ড বলে চিৎকার করছি!
সাদা মনের সত্যভাষী মানুষেরা দিনদিন বিরল প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় সম্প্রদায়ে পরিণত হতে চলেছে! আমার স্বার্থ রক্ষা পেলেই আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি বলে আত্মতৃপ্ত হয়ে পড়ি, তাই ভালো চাকুরী পেতে বা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে ঘুষ দিতে আমাদের একটুও বাঁধে না! এই আমিই নিজে হাতে এখনো পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে সুবিধা নিয়ে থাকি! আবার আমিই এসবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফোরামে বড়বড় কথা বলে বিপ্লবের ডাক দিই! তারমানে আমি বা আমরা অধিকাংশই এখন দুমুখো সাপ!
কাজেকর্মে অসৎ কিন্তু মুখের প্রকাশে বড়ই আদর্শবাদী, যাকে বলে চোরের মায়ের বড় গলা! এটাই এখন বিশ্ব সংস্কৃতি, যে যত সুন্দর করে বা শৈল্পিকভাবে মিথ্যা উপস্থাপন করতে পারে সে ততই জনপ্রিয়! হৃদয়গ্রাহী শ্রদ্ধার স্থানগুলো দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে পড়ছে! প্রকৃত ভাল মানুষগুলো সমাজের বোঝা হয়ে গেছেন, বরং পবিত্র হজব্রত পালন করে হাজী বিশেষণ নিয়ে অপকর্ম ছেড়ে দেয়ার পরিবর্তে পূর্বের তুলনায় অধিক দুষ্কর্মে লিপ্ত হতে পারলে তিনিই সবার বাহবা কুড়াচ্ছেন। যেকোন উপায়ে টাকাওয়ালা হতে পারলেই আর কারো বাধা নেই, তিনি হবেন সমাজের সম্মানিত সুধীজন! বিশেষত যে সমাজে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বত্র শিক্ষকগণ পর্যন্ত হীনকার্য সাধনে সর্ববিষয়ে কুখ্যাতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন সে দেশে ও সমাজে আপাতত সুকর্মের আশা করে লাভ নেই!
এ যুগে আর কেউ কাউকে সম্মান দেবেন না বলে পণ করেছেন। মৃত ব্যক্তিকে নিয়েও টানাটানি করে সম্মানহানি করার জন্য আমাদের এতটুকু কুন্ঠাবোধ হয় না। আমিই সবার চেয়ে ভালো, আমার চেয়ে আর কেউ বেশী বুঝতেই পারবে না, আমার কথা মানতেই হবে। সালিশ মানি কিন্তু তালগাছ আমার, ধৈর্য্য আবার কি জিনিষ? সবুরে মেওয়া ফলে ওসব পুরনো যুগের তত্ত্ব কথা, ওসব এখন চলে না। ভদ্রতা, শালীনতা, শিষ্টাচার এসব কেতাবি কথাবার্তা বাদ দিয়ে আসেন কুৎসা রটাই, কুটনামি করি, আসেন যারে ভালো লাগে না তারে পিটায়ে পাড়ায়ে মেরেই ফেলি।
Leave a Reply