পর্ব-১
নিরাপদ খাদ্য নিয়ে আমাদের ভাবনার শেষ নেই, যা খাচ্ছি তা নিরাপদ তো, টাকা দিয়ে বিষ খাচ্ছিনা তো, খেয়ে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বো নাতো, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিভাবে বুঝবো আমরা আসলে কি খাচ্ছি? সহজ ভাবে আমরা নিরাপদ খাদ্য বলতে খাদ্য উৎপাদন হতে ভোগ পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়াকে যদি বিশ্লেষণ করি অর্থাৎ চাষাবাদ, পরিচর্যা, ফসল কাটা, বাছাই, পরিষ্কার, সংরক্ষন, প্যাকেট, পরিবহন, বিপণন ইত্যাদি সবগুলো ধাপ মিলিয়েই এ প্রক্রিয়া এবং এ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে নিরাপদতার বিষয়গুলো মেনে যে খাদ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছবে সে খাদ্যই হবে নিরাপদ খাদ্য। এ প্রক্রিয়ায় ভোক্তা খাদ্য গ্রহন নিয়ে নিশ্চিত থাকবে যে তার খাদ্য নিরাপদ এবং এ খাদ্য তার স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি করবে না। একজন সচেতন ভোক্তা তাই আশা করেন যে তাঁর খাদ্য হবে স্বাস্থ্যসম্মত, ভেজাল মুক্ত এবং রোগজীবানু মুক্ত।
কিন্তু একজন সচেতন ভোক্তা হতাশ হন যখন দেখেন, আমাদের খাদ্য সরবরাহ চেইনে এমন অনেক কিছু হয়, এমন অনেক উপকরণ ব্যবহার করা হয় যা আমদের খাদ্যকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অনিরাপদ করে ফেলে।
আমাদের সবজি, ফল-মূলসহ মাঠ ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, কীটনশক ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা না করেই ফসল কাটা, সকালে কীটনাশক ছিটিয়ে বিকালেই হাটে নিয়ে যাওয়া এসব সবারই জানা। আমরা এও জানি, আমাদের অনেক চাষি অধিক ফলনের আশায় নানান রকম হরমোন ব্যবহার করেন, ফসল সংরক্ষনের জন্য ক্ষতিকর হরমোন, রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করেন, অপরিণত ফল পাকানোর জন্য ক্ষতিকর কার্বাইড ব্যবহার করেন।
এমন একটি চলমান উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ চেইন তৈরী করা নিঃসন্দেহে কষ্টসাধ্য। আমাদের চাষি ভাইরা বলেন, আগে এত সার – কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো না, এখন করতে হয়, কারন ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য না দিয়ে উপায় কি? সমস্যা হলো কোন ফসলের জমিতে, কখন, কোন সার বা কীটনাশক কি পরিমান কি পদ্ধতিতে দিতে হবে তা না জেনেই আমাদের চাষিরা সার – কীটনাশক ব্যবহার করেন। ফলে আমদের চাষের জমির উর্বরতা এবং উৎপাদন ক্ষমতা দিনে দিনে কমে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত ফসলও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে যদিও সাময়িক উৎপাদন বাড়ছে। জমিতে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সুপারিশ করা মাত্রায় সার ব্যবহার করা হলে জমির স্বাস্থ্যের ক্ষতি কম হয়। কিন্তু সচেতনতার ঘাতটির পাশাপাশি মাটি পরীক্ষার সুযোগের সীমাবদ্ধতার জন্য মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সুপারিশ করা মাত্রায় সার ব্যবহারকারী চাষির সংখ্যা কাংখিতের চেয়ে অনেক কম। যার ফলে, আমাদের জমির স্বাস্থ্য, পরিবেশের স্বাস্থ্য এবং আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্য আজ হুমকির মুখে।
আমরা জানি, আমাদের জমিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে। ফলে মাটির অনুজীব এর সংখ্যা ক্রমশঃ কমে জীবন্ত মাটিকে মেরে ফেলছে, মাটির উর্বরতা শক্তি এবং উৎপাদন ক্ষমতা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। মাটিতে অনুজীবের ঘাটতির কারনে জমিতে দেয়া রাসায়নিক সার পুরোপুরি গাছের গ্রহণোপযোগী হতে পারে না ফলে চাষিকে ব্যবহার করতে হয় অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার।
আমাদের উৎপাদিত ফসল শুধুমাত্র চলমান চাষ পদ্ধতিই না আরো নানাবিধ কারনে আমাদের জন্য অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে।
( চলবে)
মোঃ মাকসুদুর রহমান
কৃষি উৎপাদন, সরবরাহ শিকল ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ।
ই-মেইলঃ maksudurrahman1363@gmail.com
Good Initiative…
Safe food, safe life..
অসাধারণ বন্ধু। খাদ্য ও খাবার নিয়ে তোমার প্রতিবেদন অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবার নিয়ে অধিকতর সচেতন হওয়া আবশ্যক ও গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমার জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি।
এটি খুবই ভাল উদ্দোগ, অনেকদিন পর সুন্দর একটি প্রতিবেদন পরলাম। আশা করি পরবতিতে আরো ভালো কিছু পড়তে পারবো।