সুহৃদ মানুষেরা অধিকাংশক্ষেত্রে নিজেকে আড়ালে রাখতে চান। একারনে তাঁদের অনেক সময় ঠিকমতো বুঝে ওঠা যায় না, অনেকে ভুলও বুঝে থাকেন এমন অন্তর্মূখী আচরণের জন্য। তবে অনেকেই আবার নিরবে ভালো কাজগুলো করে যেতে থাকেন, নিজেকে প্রকাশিত করতে না চাইলেও অনন্যসাধারণ কাজের কারনে জনসম্মুখে প্রচারিত হয়ে যান। তখন আমরা জানতে পারি আহা কি ভালো মানুষ তিনি, তখন সবাই বাহবা দিতে উঠে পড়ে লাগি, যদিও কোন সাদা মনের মানুষ প্রশংসা পাবার জন্য বা অর্থনৈতিক লাভের জন্য সমাজহিতৈষী ভালো কাজগুলো করেন না। নিজের আত্মার আনন্দের জন্যই করেন কিছু না পাবার আশাতেই, ফলে অধিকাংশ সুহৃদ মানুষেরা পর্দার আড়ালেই থেকে যান সারা জীবন। আমরা তাঁদের বলতে পারি মানবিক আত্মা, পৃথিবীতে চলমান সমগ্র কু-কর্মের বিপরীতে ঢাল হিসেবে এরাই রক্ষা করেন পৃথিবী তথা সমগ্র মহাবিশ্বের সৃষ্টি সমূহকে। কেননা পৃথিবী জুড়ে এক শ্রেণির মানুষ যুগে যুগে এতোই অনাচার অবিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে যে সয়ং সৃষ্টিকর্তা রুষ্ঠ হয়ে নানাবিধ প্রলয়ংকারী প্রাকৃতিক দূর্যোগ সৃষ্টি করে সাবধানতার বাণী দিতে চান। তবুও তিনি সমগ্র মহাবিশ্বকে ধবংশ করে দেন না শুধুমাত্র এইসব Good Soul দের উপর কৃপা করে!
সাদা মনের মানুষেরা কারো দ্বারা নিগৃহীত, অপমানিত বা নির্যাতিত হয়েও তাদের ক্ষমা করে দেন সহজে। তাঁরা সমগ্র পৃথিবীর মানুষ, প্রাণীকূল ও উদ্ভিদের জন্য সমান ভালোবাসা অনুভব করেন। মহাবিশ্বের যাবতীয় সৃষ্টির প্রতি তাঁদের প্রেমের অসীম ক্ষমতা জাতি, ধর্ম, দেশ নির্বিশেষে সবার উর্ধেব অবস্থান করে। অন্য ধর্ম বা জাতির কাউকে তাঁরা একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি বলে দেখেন, তাঁরা কাউকেই ছোট বা বড় হিসেবে ভাবেন না। তাঁরা যেখানেই যেভাবে যে পরিস্থিতিতেই থাকুন না কেনো কখনোই হতাশ হন না। তাঁরা আস্তিক হলে সৃষ্টিকর্তার নিকট অবিরাম শুধু সকলের ভালোর জন্য বা মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করতে থাকেন আর নাস্তিক হলেও সমগ্র সৃষ্টির রক্ষায় নিজেকে উতসর্গ করতে প্রস্তুত থাকেন। তাঁরা নিরবে আছেন বলেই আমরা অনেকেই সরবে পৃথিবীতে নিজেদের জাহির করার সুযোগ পেয়ে থাকি, এমনকি বুঝে না বুঝে এমন সুহৃদদের আঘাত করি, অনিষ্ট করি। তবুও তাঁরা আমাদের কারো উপর অভিশাপ দেন না, তাঁরা অনেকটা আমাদের মায়ের মতো, সন্তানের দেয়া সব যন্ত্রণা হাসিমুখে মেনে নেন, সন্তানের মঙ্গল কামনা থেকে বিচ্যূত হন না। তাঁদের মনটা থাকে শিশুদের মতোই সরল, কোন লোভ-লালসা কিম্বা অনিষ্টকর চিন্তাই তাঁদের স্পর্ষ করে না। হাসিমুখে সকল কষ্ট বরণ করে নিয়েও সকলের ভালোর জন্য চলে তাঁদের নিরন্তন প্রার্থনা ও মহাকালের ধ্যান।
আমরাও কিন্তু নিজেদের এমন Good Soul হিসেবে ভাবতে পারি! শুধুমাত্র কিছু কু-অভ্যাস ছেড়ে দিলেই নিজেদের জন্য এবং সকলের জন্য আনন্দময় জীবন উপহার দিতে পারি। হিংসা, লোভ, পরশ্রীকাতরতা মাত্র এই তিনটি দস্যুকে পরাজিত করতে হবে এবং নিজেদের চরিত্রে বিনয়, ভালোবাসা ও সরলতার অনুপ্রবেশ ঘটাতে হবে! এই কাজগুলো খুবই সাধারণ যেকোন সাদা মনের মানুষদের কাছে, কিন্তু এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো দুইভাবে অর্জিত হতে পারে। প্রথমতঃ একদম সৃষ্টিকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে অর্থাৎ জন্মগতভাবেই আর দ্বিতীয়তঃ সাধনার মাধ্যমে অর্জন করা। আমরা দেখেছি যুগে যুগে বহু মনীষীগণ ধ্যানের মাধ্যমে কু-অভ্যাস ত্যাগ করতে সমর্থ হয়েছেন এবং পৃথিবীতে তাঁরা মানুষের জন্য শিক্ষনীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। কারন নিজের অন্তর্নিহিত চরিত্রের বাইরে যাবার যে ভাবনার উদয় হওয়া মোটেই সহজ কোন ব্যাপার নয়, এটাও অনেকটা ঐশ্বরিক। একজনের ভিতর হঠাৎ করে মানব চরিত্রের খারাপ গুণগুলো ছুড়ে ফেলে ভালো গুণগুলো গ্রহণ করার যে উপলব্ধি তৈরি হবে তা কিন্তু প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। যদিও চরম দস্যুও নিজস্ব উপলব্ধির মাধ্যমে পূর্ণাত্মা হিসেবে পৃথিবীতে আভির্ভূত হবার কিংবদন্তি গল্পগুলো আমরা জানি।
পল্লব খন্দকার, ০১ জুলাই ২০২৩।
ভালো লাগলো, নিজের জীবনের সাথে কিছুটা মিল খুঁজে পেলাম।
লেখকের জন্য শুভেচছা নিরন্তর