আমরা খুব সহজে কাউকে অনেক সময় বলি, ভালোবাসি। সেটা কখনো পছন্দ, ভালো লাগা, কিংবা কোনো সম্পর্ক সামাজিকতা, পারস্পরিক সম্মতি অথবা কখনো জোর করেও বলে ফেলি ভালোবাসি। কিন্তু আমরা অনেকে জানি না কাউকে ভালোবাসি বললেই তার উপর ভালোবাসার অধিকার জন্ম নেয় না।
ভালোবাসি টা হয়তো খুব ছোট সহজ একটি শব্দ, সেটা হয়তো মুখে অনেক বলা যায়। কিন্তু কারো প্রতি ভালোবাসার অধিকার কিন্তু সহজে হয় না। হয়তো মৌখিক সম্মতিতে কেউ ভালোবাসি বললেও মন থেকে ভালোবাসার অধিকারটা মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই অর্জন করে নিতে হয়।
অনেকে আছে, কাউকে খুব সহজেই ভালোবাসি বলতে কিংবা ভালোবাসা প্রদর্শন করতে পারে। কিন্তু যে মানুষটাকে ভালোবাসে সেই মানুষটি সম্পর্কে গভীরভাবে জানে না। তার ভালো লাগা, পছন্দ, প্রিয় শখ, অনুভূতি কিংবা সেই মানুষটি জীবনের কষ্ট, স্মৃতি, একান্ত অনুভূতিগুলো। সেই মানুষটি মনের ভিতরটাকে জানা বোঝা উপলব্ধির চেষ্টাটুকুও থাকে না। তবুও মানুষ ভালোবাসার অধিকার নিয়ে অনেক কিছু বলে থাকে। কখনো সেই অধিকারের জোর দেখিয়ে কাউকেবা কষ্ট দিতে কার্পণ্য বোধ করে না। তাহলে এটি কি সত্যিই ভালোবাসা ? কোনো মানুষের অনুভূতি কষ্ট, চোখের জল যে ভালোবাসা বুঝতে পারে না? সেটি তো মনের উপর জোর করে ভালোবাসার অধিকার নেওয়া মাত্র। যা সময়ের সাথে সাথে ক্ষয়ে যেতে থাকে।
অনেকে আবার মনে মনে এককভাবে কাউকেবা ভালোবেসে ভালোবাসার একটি অধিকার নিতে চেষ্টা করে। সে যখন ভালোবাসে মনে করে আর একটি মানুষও তাকে একইভাবে ভালোবাসে। তখন বিপরীত পক্ষ থেকে সেও সমান ভালোবাসা পাবার আকাংঙ্খা করে, যদি না পায় হতাশ হয়ে পড়ে অথবা জোর জবরদস্তি করে ভালোবাসা আদায় করে নিতে চায়! তবে কেউ কেউ একতরফাভাবে জেনেশুনেই কাউকেবা ভালোবাসে, মনে মনে জেনেই নেয় সে যাকে ভালোবাসে তার ভালোবাসা সে পাবে না। শুধুই মনের সান্ত্বনা পেতে একতরফাভাবে ভালোবেসে যায়, যা সময়ের সাথে প্রকাশ পায় অথবা পায় না।
ভালোবাসার অধিকার তার থাকা উচিত, যে ভালোবাসার মানুষটি মনের অনুভূতি, ভালো লাগা চাওয়া পাওয়া সুখ অনুভূতি বুঝতে পারে, যার জীবনে শুধু ভালোবাসি এটি বলার চেয়ে ভালোবাসা দিয়ে যে সেই মানুষটিকে ভালো রাখতে পারে, অনুভূতি বুঝতে পারে, ভালোবাসার মানুষটিকে ভালোবেসে হারিয়ে ফেলার ভয়ে এক সূক্ষ্ণ অনুভূতি তার অন্তরে কাজ করে। যে সব সময় সেই মানুষটিকে আরো গভীরে ভালোবাসার বাঁধনে বেঁধে রাখতে পারে। ভালোবাসার অধিকারটি এভাবেই ভালোবাসা দিয়ে কারো মনে অর্জন করে নিতে হয়। সেটিই হলো ভালোবাসার প্রকৃত অধিকার।
ক্ষমতার জোর, ঝগড়া, রাগ বা ভয় ভীতি দিয়ে মানুষ ভালোবাসার অধিকার কখনোই অর্জন করতে পারে না। দুটি মনের ভালোবাসার গভীর অনুভূতি দিয়েই সেটি অর্জন করতে হয়। কিন্তু এই সহজ সত্যটি আমরা বুঝতে চাই না, ভালোবাসি বলা মানেই শুধু একটি শব্দ উচ্চারণ করা নয়। এর সাথে জড়িত গভীর মমত্ব, সুকঠিন দায়িত্ববোধ এবং পরষ্পরের প্রতি দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার। সেকারনেই কম বয়সী ছেলেমেয়েরা ভালোবাসা শব্দটির অতল গভীরতা না বুঝেই সাময়িক ভালোলাগাকেই গভীর ভালোবাসা মনে করে জীবনে অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত নিয়ে চরম দূর্ভোগের শিকার হয়।
আমরা সবাই হয়তো ভাবি, ভালোবাসি বললেই হয়তো ভালোবাসা থাকে, বা ভালোবাসা বেঁচে থাকে আর মুখে উচ্চারণ না করলেই বুঝি ভালোবাসা দূর্বল হয়ে যায়! কিন্তু সেটি কোনোভাবেই নয়, কিছু মৌলিক উপাদান যদি ভালোবাসায় থাকে তবেই কোনো ভালোবাসা সত্যিকার অর্থে ভালোভাবে টিকে থাকে বা আজীবন সে ভালোবাসা জীবন্ত থাকে। এই মৌলিক উপাদানগুলোর কোনোটা যদি কখনো হারিয়ে যেতে থাকে তবে একসময় ভালোবাসাও হারিয়ে যায়…………
ভালোবাসায় পারষ্পারিক আস্থার এই বিষয়গুলো গভীরভাবে জড়িত।
ভালোবাসার অনেকগুলো উপাদানের মধ্যে কোনো একটি ছাড়া ভালোবাসা অসম্পূর্ণ হয়ে যাবে, বা পরিপূর্ণতা পাবে না। যে ভালোবাসায় ভালোবাসা = বিশ্বাস, সম্মান, নির্ভরতা, ভরসা, প্রতিশ্রুতি, সাহস, প্রশংসা, গ্রহণযোগ্যতা, স্বচ্ছতা, সিদ্ধান্ত, সততা, সহানুভূতি, বোঝা পড়া, কর্তব্য, সবকিছু দুজনে শেয়ার করা, আপোষ করা, বিবেচনা করা, উপলব্ধি, যত্ন নেওয়া, স্থায়িত্ব, ত্যাগ করা, নৈতিকতা, মানসিক সমর্থন, গভীর বন্ধুত্ব, অপেক্ষার আনন্দ, বন্ধন ইত্যাদি উপাদান বা উপসর্গগুলো বিদ্যমান থাকে তাকেই বলে পরিপূর্ণ ভালোবাসা। এই ভালোবাসার সাথে ভালোবেসে একসাথে পথচলা যায় আজীবন।
বনানী ঘোষ, খুলনা থেকে।
Leave a Reply